বাংলার দুগ্গা পুজো: কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজোর অবাক করা বিষয়টা কী জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: কয়েকশো বছরের পুরনো কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির পুজো। কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গা প্রতিমা ‘রাজরাজেশ্বরী’ নামে পরিচিত। পুজোর জনপ্রিয়তা সারা জেলা জুড়ে। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এই পুজোর প্রচলন করেছিলেন। রামচন্দ্র সমাদ্দারের প্রথম পুত্র মানসিংহের সহযোগী দুর্গাদাস সমাদ্দার, পরে যিনি পরিচিত হন ভবানন্দ মজুমদার নামে, রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীর প্রদত্ত ১৪ পরগনার সনদ সূত্রে তিনি নদীয়ার রাজা হন এবং নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ থানার মাটিয়ারিতে রাজধানী স্থাপন করে করে নদীয়া রাজবংশের সূচনা করেন। পরবর্তীতে নদীয়ার রাজারা রায় উপাধি গ্রহণ করেন। তারপর গোপাল, রাঘব রায় ও রুদ্র রায় মসনদে বসেন। রুদ্র রায় প্রাচীন রেউই গ্রামে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন ও রেউই নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করেন কৃষ্ণনগর।
কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ির পুজোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল, দেবী রাজরাজেশ্বরীর ঘোটকমুখী সিংহ বিরাজমান। অন্যান্য দেবী দুর্গা মূর্তির তুলনায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজ রাজেশ্বরীর মূর্তি একেবারেই আলাদা। সাবেকি রীতি অনুসারে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়। রাজরাজেশ্বরীর পেছনের চালিতে চালচিত্র লক্ষ্য করা যায়। মহাসমারোহে রাজ পুরোহিত নদীয়ার কৃষ্ণনগর রাজ বাড়ির রাজরাজেশ্বরীর পুজো করেন।
জানা গিয়েছে, উলটো রথের পরের দিন পাট পুজোর মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের কাজ। প্রচলিত দুর্গা প্রতিমার থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির রাজরাজেশ্বরীর মূর্তি একেবারেই আলাদা। রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই মূর্তি তৈরি করতেন বিখ্যাত শিল্পী সাধন পাল। রাজরাজেশ্বরী দেবীর সামনের দুটি হাতই বড়। পিছনের আটটি হাত অপেক্ষাকৃত ছোট হয়। দেবীর গায়ে বর্ম। দেবী থাকেন রণং দেহি সাজে।
রাজবাড়ির এই পুজোর পাঁচ দিন বিভিন্ন রকমের ভোগ নিবেদন করা হয় পুজোয়। খিচুড়ি, ভাজা, ছেঁচড়া-সহ একাধিক তরকারি, চাটনি, সুজি, পায়েস থাকে পুজোর ভোগে। সপ্তমীতে সাত রকমের ভাজা হয়। অষ্টমীতে পোলাও, ছানার ডালনার সঙ্গে ভাত, আট রকম ভাজা, মিষ্টি, ক্ষীর-সহ একাধিক পদ থাকে। নবমীতে নয় রকম ভাজা, তিন রকম মাছ, ভাত, মিষ্টি থাকে। দশমীতে গলা ভাত, সিঙি মাছ, খই, ফল, দই, চিড়ে ভোগ দেওয়া হয়। পুজোর পাঁচ দিন কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো দেখতে ভিড় করেন অসংখ্য মানুষ।
পথনির্দেশ: শিয়ালদহ থেকে কৃষ্ণনগরের নিজস্ব রেলওয়ে স্টেশন। ওখানে স্থানীয়দের জিজ্ঞাসা করে অটো বা টোটো করে কৃষ্ণ নগর রাজবাড়ি। অথবা কলকাতার ধর্মতলা থেকে কৃষ্ণনগরগামী বাসে যেতে পারেন।