টার্গেট ফালাকাটা উপনির্বাচন, লিড দিলেই মিলবে পুরস্কার, ঘোষণা রাজ্য বিজেপির
তৃণমূল কংগ্রেসের ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)-এর টিমকে টেক্কা দিতে বিজেপি ছক কষে পালটা প্রস্তুতি নিল। উপনির্বাচনকে টার্গেট করে তৃণমূল ফালাকাটায় বুথস্তরকে গুরুত্ব দিচ্ছে। পিকের নির্দেশে ভোটার তালিকা ধরে সমীক্ষা চালানোর পাশাপাশি জোড়াফুল শিবির বুথস্তরের কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি পরিবারের দিকেও বাড়তি নজর রাখছে। এসবের পালটা হিসাবেই বিজেপি এই বিধানসভা কেন্দ্রের ১৩টি গ্রাম পঞ্চায়েতে নির্বাচনি পর্যবেক্ষক নিয়োগ করেছে। এই বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা বুথ, শক্তিকেন্দ্র ও অঞ্চল ধরে ধরে তিন ধাপে পর্যালোচনার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করবেন। উপনির্বাচনে বেশি ভোট লিড দিতে পারলে বিজেপি দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের পুরস্কৃত করার কথাও ঘোষণা করেছে। তবে তৃণমূলের দাবি, বিজেপি তাদের কৌশলকে অনুকরণ করলেও লাভ হবে না। বিজেপির পালটা দাবি, এটা কোনও অনুকরণ নয়, তাদের সাংগঠনিক কার্যকলাপ।
ফালাকাটায় উপনির্বাচনের সম্ভাবনা থাকায় করোনা পরিস্থিতিতেও কয়েক মাস ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক রাজনৈতিক কর্মসূচি হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে বিজেপির তুলনায় অনেকটাই পিছিয়ে থাকায় রাজ্যের শাসকদল পিকের টিমের নির্দেশেই এগোচ্ছে। তবে তুলনামূলকভাবে ফালাকাটায় বিজেপির প্রকাশ্য কর্মসূচি সম্প্রতি কম হয়েছে। কিন্তু গেরুয়া শিবির এজন্য চুপচাপ বসে নেই। এই দলেরও ধারাবাহিক সাংগঠনিক কার্যকলাপ চলছে। বিজেপি সূত্রে খবর, ফালাকাটা বিধানসভা কেন্দ্রে দলের চারটি মণ্ডল কমিটি রয়েছে। এছাড়াও ৬১টি শক্তিকেন্দ্র এবং ২৬৬টি বুথ কমিটি রয়েছে। কিন্তু উপনির্বাচনে লড়াইয়ে জন্য বিজেপি এবার মণ্ডল কমিটির উপর পুরোপুরি আস্থা রাখতে পারছে না। কিছু ক্ষেত্রে মণ্ডল সভাপতিরা জেলা কমিটিকে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন বলে অভিযোগ। এজন্য এবার জেলা কমিটির নেতাদেরই অঞ্চলভিত্তিক পৃথক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফালাকাটার ১৩টি অঞ্চল দেখাশোনার জন্য বিজেপি ১৩ জনকে পর্যবেক্ষক হিসেবে নিযোগ করেছে। দায়িত্ব পেয়ে তাঁরা সাংগঠনিক কার্যকলাপ শুরু করেছেন।
সূত্রের খবর, জেলা বিজেপি সংশ্লিষ্ট ১৩ জনের কাছ থেকে গোটা বিধানসভা কেন্দ্রের আপ-টু-ডেট তথ্য সংগ্রহ করবে। তাঁরা কীভাবে কাজ করবেন সেই গাইডলাইনও বলে দেওয়া হয়েছে। এখন বেশি জমায়েত করে প্রকাশ্য কর্মসূচি করা যাবে না। পর্যবেক্ষককে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের বুথ ধরে ধরে বৈঠক করে বুথের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। দ্বিতীয় ধাপে পর্যবেক্ষকরা শক্তিকেন্দ্রের সঙ্গে বৈঠক করবেন। শেষ ধাপে গোটা অঞ্চলকে কেন্দ্র করে পর্যালোচনা করতে হবে। এভাবে তিনটি স্তরে লাগাতার কাজ করে খুঁটিয়ে সেই রিপোর্ট জেলায় পাঠাতে হবে। বিজেপি পর্যবেক্ষকদের কাজে উৎসাহ দিতে পুরস্কারের কথাও ঘোষণা করেছে। ফালাকাটার এক পর্যবেক্ষক বলেন, ভোটে বেশি লিড পাওয়ার টার্গেট নিয়ে দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করেছি।
তবে বিজেপি ১৩ জন পর্যবেক্ষকের নাম প্রকাশ করতে চায়নি। দলের জেলা সভাপতি গঙ্গাপ্রসাদ শর্মা বলেন, কারও নাম বলতে পারব না। দলের রণনীতি অনুযায়ী জনসংযোগ নিবিড় করতেই এটা করা হয়েছে। যে ১৩ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে ভোটে সর্বোচ্চ লিডের ক্ষেত্রে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান দখলকারীদের পুরস্কার দেওয়া হবে। পৃথকভাবে ত্রিস্তরীয় বৈঠক হবে। বুথে জনসংযোগের জন্য ১০-১৫ জনের দায়িত্ব থাকবে। ওই কর্মীরা নিয়মিত নির্দিষ্ট বাড়িতে যাবেন। তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ ও রাজ্য সরকারের দুর্নীতির কথা প্রচার করবেন। তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সন্তোষ বর্মন বলেন, বিজেপির পায়ে নীচের মাটি সরে গিয়েছে। তারা আমাদের কৌশল অনুকরণ করছে। তবে এসব কাজে আসবে না। আমাদের আরও নিবিড়ভাবে কাজ হচ্ছে।