বাংলার দুগ্গা পুজো: জেনে নিন শান্তিপুরের জজ বাড়ির পুজোর ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নদীয়ার বনেদি বাড়ির পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম তর্কবাগীশ লেনের জজ বাড়ির পুজো। বহু বছর আগে বিহারের গয়ার যদুয়াতে স্বর্গীয় পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়ের জমিদারি ছিল। জানা গিয়েছে এই চট্টোপাধ্যায় পরিবার আদতে চৈতল মাহেশের বংশ। সেই জমিদার বংশেরই আদিপুরুষের বসতবাটি ছিল অবিভক্ত বাংলার নদীয়া জেলার শান্তিপুরে, যা বতর্মানে তর্কবাগীশ লেনের জজ বাড়ি নামে পরিচিত।
দেবী পুরাণ মতে একচালা ঠাকুরের মৃন্ময়ী রূপ পুজো হয় এখানে। এখানকার পুজোর ভোগে থাকে সপ্তমীর দিন নিরামিষ, অষ্টমীর দিন ইলিশ মাছ, নবমীর দিন কচুর শাকসহ ১৭ রকমের ভোগ দেওয়া হয়। জমিদারি আমলে নবমীর দিন ১০৮ টা মোষ বলি ও ২৮ টা পাঁঠা বলি হত। তবে এখন কুমড়ো বলি হয়। দশমীর দিন মায়ের ভোগে দেওয়া হয় পান্তা ভাত।
নদীয়ার শান্তিপুরে তর্কবাগীশ লেনে জজ বাড়ির পুজোয় আজও নিষ্ঠা ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যায়। বনেদী জমিদার বাড়ির রীতি অনুযায়ী বংশ পরম্পরায় বাড়ির সদস্যরাই এই পুজোর পৌরোহিত্য করেন। একসময় বড় বড় নৌকায় মায়ের ভোগের সরঞ্জাম আসত। কাটোয়া থেকে মায়ের সাজ আসতো। মায়ের পটের নিচে একটা পঞ্চ মুন্ডির আসন আছে, যা সম্পূর্ণ মাটির তৈরি।
স্বর্গীয় পীতাম্বর চট্টোপাধ্যায়, গিরিশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, মহিমা রঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, হাজারী লাল চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণের পর বর্তমানে তাঁদের বংশধর এবং উত্তরসূরীরা বহু বছরের স্মৃতি বিজড়িত মা দুর্গার পূজার্চনা করে আসছেন।
বিগত কয়েক বছর আগে নবমীতে জজ বাড়িতে কর্দমাক্ত উৎসব পালন করা হত। বাইরে থেকে প্রচুর ছেলেরা বাজনা বাজিয়ে আসতেন গায়ে কাদা এবং জল মেখে। দুর্গাপুজোর যে মন্দির আছে নাট মন্দিরের মাঠে তারা এই কর্দমাক্ত উৎসব পালন করতেন এবং তারা প্রচুর উপহার দেওয়া হত। এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে আসছেন অজিত কুমার পালের বংশধর। অতীত থেকেই মায়ের সাজসজ্জা আসে কাটোয়া থেকে। সোনা রুপোর গয়না দিয়ে দেবী মা সুসজ্জিত। আজও পুজো উপলক্ষে অগণিত মানুষের সমাগম হয় এই বাড়িতে।
পথ নির্দেশ: https://maps.app.goo.gl/YNVdy25sCLr7e8646