মোদীর বিশ্বকর্মা প্রকল্প নিয়ে উঠছে প্রশ্ন
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: রবিবার (১৭ সেপ্টেম্বর), প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কারিগর সম্প্রদায়কে ঋণ প্রদান, প্রশিক্ষণ এবং বিপণনে সহায়তার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা প্রকল্প’ চালু করেছেন। তবে, এই প্রকল্পটি নিয়ে ওবিসি সম্প্রদায়ের নেতারা অনেকেই সমালোচনা করছেন।
১৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্মদিন। প্রতি বছর এই দিনেই হয় বিশ্বকর্মা পুজো। এ বছর যদিও তারিখ বদলেছে। বাংলা ক্যালেন্ডার মতে এ বার পুজো সোমবার, ১৮ সেপ্টেম্বর। কিন্তু মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, রবিবার বিশ্বকর্মা জয়ন্তী। এমনকি, রবিবার নয়াদিল্লিতে যে যশভূমি কনভেনশন সেন্টারের উদ্বোধন করেছেন তিনি সেখানে পুজো ও করেছেন বিশ্বকর্মার মূর্তিতে। পিএম বিশ্বকর্মা যোজনার ঘোষণাও করেছেন সেখানেই।
দেশের ১৮টি ক্ষেত্রের কারিগরেরা এই সুযোগ পাবেন। এঁদের মধ্যে রয়েছেন রাজ মিস্ত্রি, ছুতোর মিস্ত্রি, কামার, স্বর্ণকার, মৃৎশিল্পী, ভাস্কর, অস্ত্র কারিগর, নৌকার কারিগর, হাতুড়ি-ছেনি-রেঞ্জের মত ছোট খাটো সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক, তালাচাবির কারিগর, জুতো তৈরি বা জুতো সারাইয়ের কারিগর, ঝাঁটা – ঝুড়ি – মাদুর – পাপস বোনার শিল্পী, ঐতিহ্যবাহী পুতুল এবং খেলনার কারিগর, ধোপা, নাপিত, দর্জি, মাছের জাল তৈরির কারিগর, মালা তৈরির শিল্পী, পাথর কাটার কারিগরেরা। এরকম ৩০ লক্ষ পরিবারের কাছে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকারের লক্ষ্য পাঁচ বছরের জন্য এই প্রকল্পের জন্য ১৩,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
এই ‘বিশ্বকর্মা’দের প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা শংসাপত্র দিয়ে পরিচিতি দেওয়া হবে। দেওযা হবে বিশেষ পরিচয় পত্রও। নিজেদের দক্ষতা বাড়িয়ে নিতে দু’রকম প্রশিক্ষণ নেওয়ার সুযোগও থাকবে তাঁদের। বেসিক এবং অ্যাডভান্সড। প্রশিক্ষণ চলাকালীন কারিগরদের ৫০০টাকা করে দেওয়া হবে। আধুনিক যন্ত্রপাতি কেনার জন্য প্রত্যেককে ১৫ হাজার টাকার ইনসেন্টিভস দেওয়া হবে। এ ছাড়া ৩ লক্ষ টাকার ঋণ দেওয়ারও ব্যবস্থা থাকবে। মাত্র ৫ শতাংশ সুদের বিনিময়ে। প্রথম দফায় ১ লক্ষ দেওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় ২ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে একই সুদের হারে। ১৫ আগস্ট মোদির স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতার সময় এই প্রকল্পটি প্রথম ঘোষণা করা হয়েছিল।
দ্য টেলিগ্রাফের মতে অনেকে এই প্রকল্পটি আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তাঁদের মতে এই প্রকল্পটি জাতি-ভিত্তিক পেশাকে শক্তিশালী করবে এবং নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের সদস্যদের প্রকৃত অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। আবার অনেকে এটিকে উপেক্ষিত সম্প্রদায়ের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণমূলক প্রকল্প হিসেবে দেখছেন।
“পি.সি. মোস্ট ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ফোরামের চেয়ারপার্সন পতঞ্জলি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, “এই স্কিমটি কারিগর সম্প্রদায়ের লোকদের আরামদায়ক জীবনযাপন করতে মোটেই সাহায্য করবে না। এটি তাদের প্রকৃত অগ্রগতিকে অস্বীকার করবে।’’ তাঁর মতে, “এই সম্প্রদায়ের লোকেরা মূলত তাদের বর্ণ-ভিত্তিক পেশার সাঙ্গে যুক্ত থাকার কলঙ্ক থেকে বাঁচতে এবং তাদের সন্তানদের জন্য উন্নত জীবন এবং উন্নত শিক্ষার জন্য গ্রাম থেকে শহরে স্থানান্তরিত হয়। নতুন প্রকল্প গ্রামে তাদের (‘ঐতিহ্যবাহী’) পেশার দিকে পুনরায় ঠেলে দেবে এবং তাদের সন্তানদের মানমতো শিক্ষার সম্ভাবনা থেকে বঞ্চিত করবে। তারা উদ্যোক্তা হতে পারে না বা মূলধারার শিক্ষার বা প্রশাসনের অংশ হতে পারে না।