কলকাতা বিভাগে ফিরে যান

আসমুদ্রহিমাচল পায়রার সঙ্গে উড়ছে টাকাও! বিষয়টা কি?

September 22, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রানি রাসমণির বাড়িতে বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল বেশ কয়েকটি ‘হোমার পায়রা’। হোমার পায়রা হল বিশেষ প্রশিক্ষিত পায়রা। এদের ব্যবহার করা হত ডাক বিভাগের কাজে, এমনকী যুদ্ধক্ষেত্রেও। বিশেষত প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় হোমার পায়রাদের ব্যবহার ছিল উল্লেখযোগ্য। রাজনৈতিক কারণেই হয়তো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার রানির বাড়ির পায়রাগুলিকে বাজেয়াপ্ত করে নেয়। যুদ্ধ শেষ হলে অল্প কিছু পায়রা ফিরিয়ে দিয়েছিল তারা রাসমণির বাড়িতে।

গত শতকের গোড়ার দিকে রানি রাসমণির বাড়ি সহ কলকাতার বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ির সদস্যরা মিলে হোমার পায়রা নিয়ে শুরু করেন প্রথম পায়রা রেস বা পায়রা দৌড়। এই দৌড় কিন্তু ঘোড়দৌড়ের মতো নয়। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পায়রা কোনও মাঠে নয়, উড়ে যায় এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে। আবার ফিরে আসে নিজের জায়গায়। যেখান থেকে দৌড় শুরু হয়, সেখানে।

বাঙালি জমিদারদের দেখাদেখি পায়রা দৌড় শুরু করেন কলকাতার চিনেরা। তাঁরা গড়ে তোলেন ‘পিজিয়ন রেসিং ক্লাব’। বাঙালি জমিদার বনাম চিনাদের পায়রা দৌড় বেশ জমে ওঠে। বাঙালি ও চিনাদের দেখাদেখি অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান এবং ব্রিটিশরাও পায়রা দৌড়ে অংশ নিতে শুরু করে। ধীরে ধীরে গোটা দেশে ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার পায়রা দৌড়ের পরম্পরা।

সেই সব জমিদাররা এখন ইতিহাস, যাঁরা শখ পূরণের জন্য পয়সার হিসেবের তোয়াক্কা না করে পায়রা পুষতেন, ওড়াতেন, এমনকী পায়রার বিয়েও দিতেন!

গোটা দেশে এখনও জনপ্রিয় ‘পায়রা রেস’। সদ্য দক্ষিণের তারকা অভিনেতা ধনুষের একটি সিনেমায় খেলুড়ে পায়রাদের দেখানো হয়েছিল। ‘মারি’ নামে সেই সিনেমার প্লটে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল পায়রা। খেলুড়ে পায়রার থাকে ট্রেনার থেকে পুষ্টি বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক, এমনকী জিমও। ‘তারকা’ পায়রাদের জন্য থাকে আরও বিশেষ সুবিধা। ক্রিকেটের কথা মনে পড়ছে! হ্যাঁ এও এক খেলা। পায়রাদের ‘দম’-এর উপরেই দাঁড়িয়ে আছে যার ভিত।

বাংলার কৃষ্ণনগরে তৈরি হয়েছে ‘পায়রা ক্লাব’। রেসিং পায়রা সেখানেই বড় হয়। তারা অংশ নেয় সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায়। সেই ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা দীপক বিশ্বাস শোনাচ্ছিলেন গল্প। বলেন, এরাজ্যেই অন্তত ৪০টি ও গোটা দেশে প্রায় ৩০০টি এই ধরনের ক্লাব আছে। রাজ্যজুড়ে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক একটি প্রতিযোগিতায় আমরা দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলাম। এই মুহূর্তে গোটা দেশে সবচেয়ে এগিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশ। তারপরের স্থান পাঞ্জাব ও দিল্লির। পাঁচবছর আগে কৃষ্ণনগরে পায়রা ক্লাব চালু করেছিলেন দীপকবাবুরা। তিনি বলেন, পাঁচ বছরে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে ক্লাব ও প্রতিযোগিতার সংখ্যা। টাকার গল্পটা কেমন? মুচকি হেসে দীপকবাবু বলেন, রাজ্যেরই একটি প্রতিযোগিতার প্রথম পুরস্কার ছিল নামজাদা কোম্পানির বাইক।

প্রতিযোগিতার পদ্ধতিটিও অন্যরকম। অংশগ্রহণকারীরা নিজেদের এলাকা থেকেই পায়রা উড়িয়ে দেন। আকাশে কতক্ষণ এবং কতটা উপরে পায়রা উড়ল তার উপরেই নির্ভর করে জয়-পরাজয়। ওই উড়ান মাপতে রেফারি থাকেন। রাজ্যের প্রতিযোগিতা হলে ভিন জেলা এবং দেশের প্রতিযোগিতা হলে ভিন রাজ্য থেকে রেফারিরা আসেন। ‘লড়াই’য়ের জন্য পায়রাদের তৈরি করাও একটি লড়াই। প্রতিযোগিতায় বহুমূল্য গোরেবাজ থেকে টিপলার, মাদ্রাজ, হোমার প্রজাতির পায়রাদের নামানো হয়। গোটা দেশে ছড়িয়ে আছেন ‘ওস্তাদ’রা। আসলে ট্রেনার। তাঁরাই পায়রাদের তৈরি করেন। থাকে বিশেষ খাদ্যতালিকা এবং ওষুধ। খরচ হয় হাজার হাজার টাকা।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#pigeon, #Kolkata, #racing pigeons

আরো দেখুন