দেশ বিভাগে ফিরে যান

মহিলা সংরক্ষণ বিলের আড়ালে রয়েছে বিজেপির আসল লক্ষ্য, জানেন সেটা কি?

September 23, 2023 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বুধবার বিপুল সংখ্যাধিক্যে লোকসভায় পাশ হয়েছে মহিলা সংরক্ষণ বিল। বৃহস্পতিবার বিলটি পেশ হয়েছে রাজ্যসভায়। তবে বিল পাশ হলেও শেষমেশ বাস্তবে তা কার্যকর করতে আরও বেশ কয়েক বছর লাগবে বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাতে কী? বিজেপি ২০২৪-এর ভোট ময়দানেই এর সুফল কুড়োতে চায়। সেই কারণে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছে, আর সময় নষ্ট না-করে জরুরি ভিত্তিতে এই বিলকে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমে পড়তে হবে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, সেন্সাস। রাজ্যভাগ। আসন পুনর্বিন্যাস। আর তারপরই মহিলা সংরক্ষণ আইন কার্যকর। এটাই মোদী সরকারের দীর্ঘমেয়াদি প্ল্যান। তবে সবটা নির্ভর করছে ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের ফলাফলের উপর। ক্ষমতায় ফিরলেই একাধিক অস্ত্রে বিরোধীদের দুর্গ ছত্রভঙ্গ করাই লক্ষ্য নরেন্দ্র মোদীর।

২০২১ সাল থেকে জনগণনার কাজ থমকে রয়েছে। করোনাকে এক্ষেত্রে ঢাল করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু তারপরও এই সংক্রান্ত কাজ এতটুকু এগয়নি। বিরোধীদের অভিযোগ, মেরুকরণের যে তাস গেরুয়া শিবির খেলছে, সেন্সাসের পরিসংখ্যান সামনে এলে তা ধাক্কা খেতে পারে। তাই অপেক্ষা চব্বিশের ফলের। সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে নরেন্দ্র মোদী আবার প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসলেই শুরু হবে একের পর এক প্রশাসনিক ও সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। তার প্রথমটাই জনগণনা। এবার হবে ডিজিটাল সেন্সাস। তাই বেশি সময় লাগবে না। রাজ্যসভায় সেকথা জানিয়েছেন বিজেপি এমপি তথা আইনজ্ঞ মহেশ জেঠমালানি। সূত্রের খবর, চারটি ধাপ ছকে ফেলেছে বিজেপি। ২০২৪ সালের পর প্রথমে সেন্সাস। দ্বিতীয় ধাপে জনগণনার উপর ভিত্তি করে রাজ্যভাগ। তৃতীয় পদক্ষেপ, ২০২৬ সালে ডিলিমিটেশন। আর তারপর মহিলা সংরক্ষণ আইন কার্যকর। রাজ্যভাগের এজেন্ডায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং অবশ্যই বাংলা। এই ইস্যু নতুন নয়। উত্তরবঙ্গের একাংশ এবং বিহারের সীমাঞ্চলের খণ্ডাংশ নিয়ে একটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের জল্পনা তুঙ্গে রয়েছে। বাংলা থেকে বিজেপির রাজ্যসভার নতুন এমপি অনন্ত মহারাজও তেমনই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। বিহারের বিজেপি সভাপতি সম্রাট চৌধুরী সম্প্রতি সীমাঞ্চলে গিয়ে বলে এসেছেন, ‘জয়ী হওয়ার পর সীমাঞ্চলের ভূগোল পাল্টে দেওয়া হবে। সব বাংলাদেশিকে তাড়ানো হবে।’ হঠাৎ একথা কেন বললেন তিনি? জানা যাচ্ছে, মুসলিম প্রভাবিত কিষানগঞ্জ তো বটেই, কাটিহার, আরারিয়া, পূর্ণিয়ার মধ্যে কিছু অংশকে উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করার ভাবনাচিন্তা রয়েছে। যুক্তি কী? বিহারের সীমাঞ্চল অনুন্নত। উত্তরবঙ্গও নাকি উন্নয়নের ছোঁয়া তেমন পায় না। নীতীশ কুমার এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে এই অভিযোগ বারবার ভুল প্রমাণের চেষ্টা করলেও প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। এবং ভোটের মুখে তা বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার এই বিল সংক্রান্ত আলোচনায় নাড্ডা বলেছেন, ‘নিয়ম মেনে যথাসময়ে মহিলা সংরক্ষণ কার্যকর হবে। কিন্তু আপনারা এখনই চাইছেন! আমরা সরকারে আছি। রায়বেরিলি, আমেথি, ওয়েনাড়, কালবুর্গীর মতো আসনগুলো মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত করে দিলে কেমন হবে?’ বিজেপি সভাপতির এই মন্তব্যে প্রশ্ন উঠছে, বেছে বেছে এই আসনগুলির নামই কেন মাথায় এল? বিশেষত নাড্ডা এমন কয়েকটি আসনের নাম করেছেন, যা গান্ধী পরিবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত। তাহলে কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরোধীদের কোমর ভেঙে দেওয়াটাই মোদি সরকারের ভবিষ্যৎ-লক্ষ্য?

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত জনসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিলের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী নিজেও বক্তব্য পেশ করবেন। তাছাড়া অমিত শাহ-জেপি নাড্ডার মতো গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতামন্ত্রীরাও ঝাঁপাবেন প্রচারে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে নামেই মহিলা সংরক্ষণ, বিজেপি’র টার্গেট কিন্তু ভিন্ন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Modi, #Parliament, #bjp, #Modi Government, #Women Reservation Bill, #Loksabha Election 2024

আরো দেখুন