এবার পর্যটন কেন্দ্র হচ্ছে বৈষ্ণব ধর্মের পূণ্যভূমি বর্ধমানের কুলীন গ্রাম
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: এবার বাংলার পর্যটন কেন্দ্র হতে চলেছে কুলীনগ্রাম। রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ রবিবার কুলীনগ্রামের বিভিন্ন মন্দির ও বৈষ্ণব মঠ পর্যবেক্ষণ করার পর এই সুখবর ঘোষণা করলেন। কুলীনগ্রাম পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের আবুজহাটি ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার অন্তর্গত একটি প্রাচীন জনপদ। বৈষ্ণব ধর্মের পূণ্যভূমি কুলীন গ্রামকে পর্যটনস্থল করার এলাকাবাসীর দাবি বহুদিনের। এবার বিষয়টি নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিল রাজ্যের পর্যটন দপ্তর।
জেনে নিন শ্রী চৈতন্যের স্মৃতিবিজড়িত কুলীন গ্রামের প্রাচীন ইতিহাস
‘শ্রীকৃষ্ণবিজয়’ কাব্যের রচয়িতা কবি মালাধর বসু। পঞ্চদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে বর্ধমানের কুলীনগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তিনি৷ ‘কুলীন’ শব্দের অর্থ হল মর্যাদাসম্পন্ন বংশের সন্তান৷ শ্রীমদ্ভাগবত ও ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ অবলম্বনে ১৪৭৩ -৮০ খ্রিস্টাব্দে রচিত শ্রীকৃষ্ণবিজয় ৷ অর্থাৎ শ্রীচৈতন্যের আবির্ভাবের আগেই রচনা করা হয়েছিল এই কাব্য৷ ‘চৈতন্যমঙ্গল ’- থেকে জানা গিয়েছে মালাধর বসুর পৌত্র রামানন্দ বসু ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেবের খুব ঘনিষ্ঠ ৷ বসু পরিবারের আমন্ত্রণেই শ্রীচৈতন্যদেব কুলীনগ্রামে আসেন এবং ৩ দিন সেখানে অবস্থান করেন৷
কথিত আছে, এই বসু পরিবারকে প্রতি বছর পুরীতে স্নানযাত্রায় কুলীনগ্রাম থেকে পট্টডোরি পাঠানোর দায়িত্ব দেন শ্রীচৈতন্যদেব৷ পট্টডোরি তুলোর উপর নানা রঙের রেশম সুতো দিয়ে পাকানো কাছি বা দড়ি ৷ এই কাছি দিয়েই জগন্নাথ , বলরাম , সুভদ্রাকে রথের সঙ্গে বাঁধা হত এবং গলায় মালার মতো পরানো হত৷
জনশ্রুতি লক্ষ্মীনাথ বসু প্রতিষ্ঠা করেন জগন্নাথ মূর্তির৷ স্থানীয়দের মতে , জগন্নাথ বিগ্রহ ৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন হলেও অনেক পরে রথযাত্রার প্রচলন হয় ৷ কুলীনগ্রামের রথযাত্রা উৎসবের প্রচলন হয় অনধিক ২০০ বছর আগে৷ বর্তমানে যে রথ টি এই গ্রামে রয়েছে তা ৫০ বছর আগের তৈরি রথ।
বহু প্রাচীন দেবদেবীর মূর্তি ও মন্দির আছে এই কুলীনগ্রামে৷ তার মধ্যে অন্যতম গোপালমন্দির। কথিত রয়েছে, রাজা বল্লাল সেনের আমলে তৈরি হয় এই গোপাল মন্দির। গোপাল মন্দির এর সামনে আছে একটি বড় জলাশয়, যার নাম গোপাল দিঘী। এই দিঘিতে স্নান করা গঙ্গাস্নানের সমতুল্য বলে বিশ্বাস এলাকাবাসীর। জনশ্রুতি শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু যে বছর পুরী গিয়েছিলেন সেইসময় এই গোপাল মন্দিরে হয়ে পুরীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন। এ ছাড়াও কুলীন গ্রামের বিভিন্ন মন্দিরে শিবানী, মদনগোপাল, গোপেশ্বর, ভুবনেশ্বরী, রঘুনাথ, কৃষ্ণরায়, গোপীনাথ, কালুরায় এবং গৌরাঙ্গর পুজো-অর্চনা হয়।
জানা গিয়েছে, কুলীন গ্রামকে পর্যটন স্থান হিসাবে গড়ে তোলার যাবতীয় প্ল্যান এস্টিমেট হয়ে গেছে। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে খুব শীঘ্রই কুলীন গ্রাম রাজ্যের পর্যটন মানচিত্রে জায়গা করে নেবে বলে আশায় বুক বাঁধছেন স্থানীয়রা।