সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা ‘AFSPA’ ছয় মাসের জন্য ফিরিয়ে আনল মণিপুর সরকার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সাময়িক শান্তির পর গত সপ্তাহ থেকে ফের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মণিপুর। গত শুক্রবার সকালে উখরুল জেলায় দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে গ্রামরক্ষী বাহিনীর তিন সদস্য মারা যান। নিহত তিন জনই কুকি গোষ্ঠীভুক্ত বলে জানা যায়।
রাজ্যে দুই শিক্ষার্থীকে হত্যার প্রতিবাদে ও ন্যায়বিচারের দাবিতে রাজধানী ইম্ফলে আজ মঙ্গলবার শত শত শিক্ষার্থী রাস্তায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বিক্ষোভকারীদের সন্দেহ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংয়ের বাসভবনের উদ্দেশ্যে রওনা হলে নিরাপত্তা বাহিনী কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ধোঁয়াবোমা ছুড়ে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তাঁদের অনকেকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়েছে। গত সোমবার দুই পড়ুয়ার দেহের ছবি ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে। তার পর থেকেই নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে মণিপুরে।
সূত্রের খবর, গত ৬ জুলাই থেকে ওই দুই পড়ুয়া নিখোঁজ ছিল বলে দাবি। ছবিতে দেখা গিয়েছে, দুই সশস্ত্র আততায়ীর সঙ্গে বসে রয়েছে দুই পড়ুয়া। অন্য একটি ছবিতে দেখা গিয়েছে, তাদের দেহ পড়ে রয়েছে। এনডিটিভি সূত্রে খবর, ওই দুই পড়ুয়ার দেহ এখনও উদ্ধার করা হয়নি। ওই দুই পড়ুয়াকে শেষ বার দেখা গিয়েছিল বিষ্ণুপুর জেলায়। অভিযোগ, ওই দুই পড়ুয়াকে অপহরণ করে খুন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, মণিপুর সরকার বুধবার বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ (AFSPA) ছয় মাসের জন্য ফিরিয়ে আনার কথা ঘোষণা করেছে। গোটা রাজ্যকে ‘উপদ্রুত এলাকা’ বলে ঘোষণা করেছে। তবে, রাজধানী ইম্ফল-সহ ১৯টি থানা এলাকাকে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
AFSPA দীর্ঘদিন ধরে মণিপুরে চালু রয়েছে। ২০২৩ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে পর্যালোচনা করে, মণিপুর সরকার ১৯টি থানা এলাকাকে উপদ্রুত এলাকার বাইরে রেখেছিল।
মণিপুরে গত বিধানসভা নির্বাচনেও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু ছিল আফস্পা। সেই সময় রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং বলেছিলেন, “আফস্পা নিয়ে উত্তর পূর্বে রাজ্যে উদ্বেগ রয়েছে। মণিপুর ইম্ফল মিউনিসিপ্যাল কাউন্সিলের সাতটি অংশ থেকে এটি প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগের কংগ্রেস সরকারও পুরোপুরি আফস্পা প্রত্যাহার করতে পারেনি। গ্রেটার মণিপুর এলাকা থেকে তারাও প্রত্যাহার করতে পারেনি। কারণ, তারা আসল ঘটনাটা জানত। মণিপুরে এখনও কিছু সমস্যা রয়েছে।”
এর অর্থ রাজ্যে নতুন করে আফস্ফা লাগু করা হল এমনটা নয়। কারণ, আগেই ১৯টি থানা এলাকায় আফস্ফা লাগু ছিল। আগে ১৫টি থানা এলাকায় ‘বিতর্কিত’ আফস্ফা লাগু ছিল। ২০২৩ সালের মার্চ মাসে আরও চারটি থানাকে তার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। ফলে বুধবারে রাজ্য সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তি নতুন কিছু নয় বলেই মনে করছেন অনেকে। যা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক।
উল্লেখ্য গত শুক্রবার মণিপুরের ইম্ফল উপত্যকার জেলাগুলিতে সেনাবাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা ‘আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’ (আফস্পা) ফেরানোর দাবি তুলে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কুকি মহিলাদের একাংশ।