বাংলার দুগ্গা পুজো: বনগাঁর দাঁ বাড়িতে শতাব্দী প্রাচীন পুজোর ইতিহাস
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত জেলা বনগাঁয় দাঁ বাড়ির দুর্গাপুজোয় দেবী বিগ্রহের সাথে নেই মহিষাসুর। এখানে মহিষাসুর ছাড়াই পুজিত হন দুই হাতের দুর্গা । এটি মায়ের অভয়া মূর্তি। এক হাতে এক ব্যক্তিকে ধরে আছেন। অন্য হাতটি জগৎ সংসারকে বরাভয় দান করছে।
জনশ্রুতি, জাহাজে বাণিজ্যে বেরিয়েছিলেন শ্রীমন্ত সওদাগর। তিনি ছিলেন গন্ধবণিক। সমুদ্রে যাওয়ার আগে আরাধ্য দেবী দুর্গাকে স্মরণ করেই রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু আকস্মিক মাঝসমুদ্রে ঝড়ের দাপটে জাহাজ ডুবে যায়। সমুদ্রের ডুবে যাচ্ছিল সওদাগরের। তখন কমলে কামিনী শ্রীমন্তের হাত ধরে উদ্ধার করেছিলেন। তারপর অভয়া মূর্তির দুর্গার পুজো শুরু করেন শ্রীমন্ত সওদাগর। তখন থেকেই দাঁ পরিবার এই অভয়া মূর্তিকেই পুজো চলে আসছে।
প্রায় ২০০ বছর আগে হুগলির বৈঁচি গ্রামে এই পুজো শুরু হয়। পরবর্তীকালে পরিবারের এক বংশধর কৃষ্ণচন্দ্র দাঁ চলে আসেন উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে। সেখানে তিনি অভয়া দুর্গার প্রতিষ্ঠা করেন। আরাধনাও শুরু তখন। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে কৃষ্ণচন্দ্রের বংশধর শ্যামাপদ দাঁ চলে আসেন বনগাঁর ট’বাজারে।
এই বাড়ির নাটমন্দিরেই তৈরি হয় একচালার বিগ্রহ। দুর্গা এক হাতে শ্রীমন্ত সওদাগরকে রক্ষা করছেন। অন্যহাতে বরাভয় প্রদান করছেন জগৎ সংসারকে।
দেবী পদ্মে আসীন। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনে এখনও বাড়ির ঠাকুরদালানে হয় পুজো। বিসর্জনেও রয়েছে অন্য নিয়ম। দশমীর দিন আদিবাসীদের কাঁধে হয় ৭বার প্রতিমা পরিক্রমা। এর পর বাড়ির পুকুরে হয় বিসর্জন। পুজোর দায়িত্ব এখন বর্তমান প্রজন্মের কাঁধে। পুজোর কটাদিন দূর-দুরান্ত থেকে আত্মীয়-পরিজনরা বাড়িতে এসে পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। চলে দেদার খাওয়া দাওয়া।
পরিবারের সদস্য সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছর জন্মাষ্টমীর দিন প্রতিমা গড়ার কাজ শুরু হয়। এই পুজোয় মুখোশ নাচ এবং চণ্ডীপাঠের প্রাচীন প্রথা এখনও চলে আসছে। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস এই দুর্গা মন্দিরটি অত্যন্ত জাগ্রত। কোনও মেয়ের বিয়ে হলে যেমন মন্দিরে গিয়ে দেবী দুর্গাকে প্রণাম করে এবং গ্রামে কোনও নববধূ এলে দেবী দুর্গাকে প্রণাম করে শ্বশুর বাড়িতে আসেন। মন্দিরের জমিতে চাষবাস করে যে ফসল বিক্রি করে যে অর্থ আসে তা দিয়েই মন্দিরের রক্ষণা-বেক্ষণ এবং পুজোর খরচ করা হয় বলে জানা গিয়েছে।