ক্যামাক স্ট্রিট, কার নামে হল এই রাস্তার নামকরণ?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ক্যামাক স্ট্রিট, বলার অপেক্ষা রাখে না! এই রাস্তার নাম এক সাহেবের নামে রাখা। যদিও এখন এর নাম রাখা হয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর সরনী। কিন্তু ওই আমাদেরই দোষ, আমরা আজও একে ক্যামাক স্ট্রিট নামেই চিনে রেখেছি। কিন্তু এক্কেকালে এর সে নামও ছিল না। জানা যায়, এই রাস্তার নাম ছিল ডানকান সাহেবকা বস্তিকা রাস্তা। অর্থাৎ কোনো এক ডানকান সাহেবের বস্তি ছিল এবং এই রাস্তা দিয়েই সেই বস্তিতে যেতে হত। প্রাচীন কলকাতায় সুবিধার জন্য এমন ভাবেই নামকরণ করা হত। ফলে বোঝা যেত কোন রাস্তা দিয়ে কোথায় যাওয়া যায়।
কিন্তু ১৭৪৮ আঁকা উডের মানচিত্র এই রাস্তার উল্লেখ নেই। তবে আপজনের মানচিত্রে নাম না থাকলেও এই রাস্তাটি আঁকা ছিল। বলাইবাহুল্য এই বস্তি আজ আর নেই, এমনিতেও থাকত না। গত শতাব্দীর শেষ ভাগে যে হারে প্রোমোটার রাজ দাপিয়ে বেড়িয়েছে তাতে রেহাই পেত না। তবে এই বস্তি ভেঙেই ক্যামাক স্ট্রিটকে প্রসারিত করা হয়েছে। এই ডানকান সাহেবের বস্তির কিছুটা আবার উড স্ট্রিট পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। সেই অংশটিও বহুকাল আগেই লুপ্ত হয়েছে।
যাকে নিয়ে এতো কথা, সেই ক্যামাক বাবুকে থুড়ি ক্যামাক সাহেবকে নিয়েই কথা হোক একটু! ক্যামাক কিন্তু পয়সাওয়ালা লোক ছিলেন। সাহেবের মালিকানায় এই শহরে জমি বাড়ি ছিল। ব্যবসায়ী ছিলেন, জমি-জায়গায়-বাড়ি-ঘর কেনাবেচা করতেন, ক্যালাকাটা গ্যাজেটে তার বিজ্ঞাপন ঘোরাফেরা করত।
রপ্তানির ব্যবসাও বেশ জমিয়ে করতেন। তাঁর নামেই নামাঙ্কিত ক্যামাক স্ট্রিট। এক্কেবারে সোজা রাস্তা, পার্ক স্ট্রিট থেকে লোয়ার সার্কুলার রোড। শিয়ালদহ থেকে মৌলালি, এস এন ব্যানার্জি রোড হয়ে, পার্ক স্ট্রিটকে ডানে ফেলে এ রাস্তা উঠেছে বেকবাগানের মুখে। অন্যদিকে থেকে এলে যে রাস্তা, রবীন্দ্রসদনের দিক থেকে বেকবাগানের মুখ পর্যন্ত চলে গেছে। বলা যায় এ রাস্তা উত্তর দক্ষিণ জুড়েছে।
ক্যামাকের কিন্তু অনেক পরিচয়, তিনি এই এলাকার বিত্তশালী অধিবাসী ছিলেন। লর্ড কর্নওয়ালিস এবং লর্ড ওয়েলেসলির সমসাময়িক সময়ের খাস কলকাতার বড়লোক কম কথা নয়।
ও এতো কথা হল, এখনও পুরো নামটাই বলা হয়নি। ক্যামাক, উইলিয়াম ক্যামাক। খানিক বন্ড স্টাইলে বললাম!
ও হ্যাঁ ক্যামাক কিন্তু ত্রিপুরা ও ঢাকা আদালতের জাজ ছিলেন। স্থাপতিও ছিলেন, তার উপর আবার লেফটেন্যান্টও। তবে ক্যামাকের এক ভাই ছিল বীর যোদ্ধা। তাঁর নাম ছিল জ্যাকব ক্যামাক। ১৭৬৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৮৪ নম্বর রেজিমেন্টে জ্যাকব যোগ দিয়েছিলেন। ১৭৬৬ থেকে বেশ কয়েক বছর জ্যাকব ২৪ নম্বর বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। ১৭৭৯-তে যুদ্ধও করেন এবং ৮১ সালের শুরুতে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদ পান। কিন্তু ১৭৮২-তে বাহিনী থেকে কর্ম বিরতি নেন এবং রোগাক্রান্ত হয়ে মারা যান। ক্যামাকের আরেক ভাই, বার্জেশ আবার ওয়েলেসলির খাস লোক ছিলেন। বোঝাই যায় সেকালের কলকাতায় ওই তল্লাটের বেশ কেউকেটা পরিবার ছিল ক্যামাকদের পরিবার। তবে উইলিয়ামই ছিলেন সর্বাধিক জনপ্রিয়। সেইকারণেই আজ দুই সেঞ্চুরি পেরিয়েও, বর্তমান নামকে কিঞ্চিৎ দূরে ঠেলে ওঁর নামে কলকাতায় রাস্তাটি পরিচিতি পাচ্ছে।
ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম
তথ্য গবেষণা: সৌভিক রাজ