বাংলার দুগ্গা পুজো: নতুন মলাটে আজ‌ও উজ্জ্বল ২১৬ বছরের নিয়োগী বাড়ির পুজো

নিয়োগী বাড়ির দুর্গার রঙ অতসী ফুলের মতো। মায়ের সঙ্গে একচালাতে ডানপাশে থাকেন সরস্বতী, গনেশ এবং বামদিকে লক্ষ্মী, কার্তিক।

October 15, 2023 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi
নিয়োগী বাড়ির দুর্গাপুজো, ছবি সৌজন্যে-অগ্নিভ নিয়োগী/ফেসবুক

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ২১৫ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ‌ও উজ্জ্বল জলপাইগুড়িতে কামারপাড়ার নিয়োগী বাড়ির পুজো। সংক্ষিপ্ত হলেও এখন‌ও এই বাড়িতে আড়ম্বরের সাথেই পালিত হয় ঐতিহ্যবাহী দুর্গাপুজো। নিয়োগীরা ছিলেন বাংলাদেশের পাটগ্রামের জমিদার। সেখানেই ১৮০৮ সালে পুজোর সূচনা হয়েছিল। ১৯১২ তে পরিবারের কয়েকজন সদস্য কলকাতার ভবানীপুরে চলে আসেন। ১৯৬৭ সালে পুজোও চলে আসে জলপাইগুড়ির কামার পাড়ার বাড়িতে।

নিয়োগী বাড়ির দুর্গার রঙ অতসী ফুলের মতো। মায়ের সঙ্গে একচালাতে ডানপাশে থাকেন সরস্বতী, গনেশ এবং বামদিকে লক্ষ্মী, কার্তিক। নবপত্রিকা বা কলব‌উ থাকে কার্তিকের পাশে। জন্মাষ্টমীতে করা হয় প্রতিমার বায়না। পুরাতন প্রথা অনুযায়ী দুর্গা পুজো শুরু হয় প্রতিপদে মহালয়ার পরদিন, চণ্ডীর মঙ্গল ঘট স্থাপনের মাধ্যমে। দশ দিন ধরে চলে চণ্ডী পাঠ। পঞ্চমীতে মণ্ডপে মনসা পুজো করা হয় এবং ষষ্ঠীতে দুর্গা প্রতিমা আনা হয়। পরিবারের সদস্যরা দেবী প্রতিমাকে সোনার অলঙ্কার এবং ফুল-মালায় সজ্জিত করেন। নিয়োগী পরিবারের যাঁরা বাইরে থাকেন, পুজোর কটাদিন তাঁরা বাড়িতে ফিরে আসেন। মহালয়ার আগে থেকে শিউলির গন্ধমাখা পুজোকে ঘিরে এই বাড়ি যেন হয়ে ওঠে এক মিলন ক্ষেত্র। এই বাড়ির পুজোর দায়িত্ব সামলান মূলত মহিলা সদস্যরাই। বনেদি বাড়ির এই পুজোতে যোগ দেয় শহরের বহু মানুষ।

নিয়োগী বাড়ির দুর্গাপুজো, ছবি সৌজন্যে-অগ্নিভ নিয়োগী/ফেসবুক

সময়ের সাথে সাথে নিয়োগী বাড়ির পুজোর জৌলুস কিছুটা কমলেও পুরাতন প্রথা ও রীতিনীতির অন্যথা হয়নি। এখন আর বাড়ির দালানে বসে না থিয়েটার, সাহিত্যের আসর। আর হয় না জোড়া নৌকোয় চাপিয়ে প্রতিমা নিরঞ্জন। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীতে আগে পাঠা বলি হত, এখন চালকুমড়ো বলি দেওয়া হয়। এই বাড়ির পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল নবমীতে শত্রুবলি। শত্রু দমনের উদ্দেশ্যে একহাত লম্বা থোরের উপর চালবাটা দিয়ে তৈরি মানুষরূপী একটি প্রতিকৃতির একগালে চুন আরেকগালে কালি মাখানো হয়। বলি দেওয়ার পর বাড়ির কোন‌ও পুরুষ সেটা অনেক দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেন।

এছাড়াও এই বাড়ির অন্যতম বৈশিষ্ট্য পুজোর পত্রিকা। পুজোর ইতিহাস, ছড়া, রচনার মতো বিভিন্ন বিষয় পত্রিকায় প্রকাশ করা। আজকের প্রজন্ম‌ও সেই রীতি বজায় রেখেছে। পরিবারের সদস্য সূত্রে জানা গিয়েছে, বহু বছর আগে ঢাকার পাটগ্রামে যখন পুজো হত, তখন খেয়ালি আর ওলোটপালট এই দুই নামে দুই হাতেলেখা পত্রিকা প্রকাশিত হত। সেখানে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় আশীর্বাণী পাঠিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে তাঁদের পারিবারিক পত্রিকা ‘জ্যোতি’ ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশের চিন্তাভাবনা রয়েছে জানা গিয়েছে।

বারোয়ারি পুজোর ভিড়ে ঢিমেতালে হলেও আজ‌ও টিকে রয়েছে জলপাইগুড়ি শহরের এই বনেদি বাড়ির পুজো। সেই স্মৃতিতে ডুব দিয়ে নস্টালজিক হয়ে পড়েন পরিবারের প্রবীণ থেকে নবীন সদস্যরা। পরিবারের বর্তমান সদস্য অগ্নিভ নিয়োগী বলেন, “প্রতিপদ থেকে আমরা মায়ের পুজো শুরু করি। এখানকার পুজোর বিশেষত্ব হল অষ্টমীর রাতে কালী পুজো। পশু বলি বন্ধ হয়ে গেছে এবং এর পরিবর্তে কুমড়া বলি দেওয়া হয়। নবমীতে, মা দুর্গার জন্য একটি বিশেষ “ঘোল” প্রস্তুত করা হয়। একে দুর্গা দোই বলা হয়। যখন পুজো পাটগ্রামে ছিল, তখন এলাকার মানুষকে বাড়ির কর্তারা নিমন্ত্রণ করে আসতেন। যাকে বলা হতো অলিক নিমন্ত্রণ।” অন্ন ভোগের পাশাপাশি মাকে দেওয়া হয় পায়েশ, লুচি, মিস্টি, দ‌ইয়ের ভোগ।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen