ধান গাছের সাধ? ‘নল সংক্রান্তি’র লোকাচার জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: হেমন্ত দোরগোড়ায়, ঋতু বদলের সময়। আশ্বিনের শেষ দিনে গারসি ব্রত পাশাপাশি নল সংক্রান্তি পালিত হয়। আদপে এটি কৃষি উৎসব। রাঢ় বাংলায় আজও নল সংক্রান্তি পালিত হয়।
খারিফ মরশুমে আমন ধান চাষ করা হয়। মনে করা হয়, এই সময় আমন ধান গর্ভবতী হয়। এই ঋতু পরিবর্তনের সময় ধান গাছের শীষ বেরোয়। সে’সময় ধান গাছগুলিকে গর্ভবতী মেয়ে হিসেবে কল্পনা করা হয়। আশ্বিনের সংক্রান্তিতে দুই মেদিনীপুরে কৃষকরা এই উৎসব পালন করেন। মেদিনীপুরে আশ্বিন সংক্রান্তি ‘নলবাঁধা সংক্রান্তি’ হিসেবেই খ্যাত।
বছরের এই সময়টাতে ধানের ভিতরের অংশটি একেবারে দুধের মতো হয়। এটিই চালে পরিণত হয়। নরম মিষ্টি দুধের ন্যায় অংশটি পোকামাকড়ের খুব প্রিয়। এই সময় পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে যায়। তারা ধানের দুধর মতো অংশটি শুষে নেয়। ফলে সেই ধান থেকে আর চালও পাওয়া যায় না। বিপদ থেকে রক্ষা পেতে কৃষকরা এক অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করেন। কৃষকদের কাছে এটিই ধান গাছের সাধভক্ষণ অনুষ্ঠান, ‘নল সংক্রান্তি’!
নল সংক্রান্তির দিন আগের দিন, অর্থাৎ আশ্বিন মাসের শেষদিনের আগের দিন নল গাছ কেটে আনা হয়। নিম, কালমেঘ, তুলসীসহ দশ-বার রকমের ভেষজ উপাদান নিয়ে, তার সঙ্গে আতপ চাল ও শুকনো চিংড়ি মাছ মেশানো হয়। তারপর মিশ্রণটিকে বড় পাতায় মুড়ে নলগাছে বাঁধা হয়। সারারাত জেগে নল বাঁধার কাজ চলে, বাঁধার সময় মুখ বন্ধ রাখতে হয়। সংক্রান্তির দিন ভোরে সূর্যোদয়ের আগে নলটি ধানজমিতে ঈশান কোণে পুঁতে দেওয়া হয়।
বলা হয় – নল পড়ল ভুঁয়ে
যা শনি তুই উত্তর মুয়ে।
শনি অর্থাৎ ফসলবিনষ্টকারী পোকামাকড়ক। এদিন সকালে নিমপাতা, হলুদ আর আতপ চালের বাটা বা আলই খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বিশ্বাস করা হয়, এতে শরীরের যাবতীয় রোগ-জ্বালা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পল্লীবাংলার এই লোকাচার আবহমানকাল থেকে ফসল রক্ষা করে চলেছে।