বঙ্গে প্রচলিত দুগ্গা পুজোর দুই ঘরানা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বঙ্গে ৫০০-১২০০ সন পর্যন্ত পাথরের মূর্তিতেই মহিষাসুরমর্দিনীর আরাধনা হতো। ১২০০ সনের পর রাজা কংসনারায়ণ শরৎ কালে প্রথম মাটির মূর্তি গড়ে পুজোর আয়োজন করেন। তার আগে বাংলাতে মহিসমর্দিনী শুধু কুলদেবী রূপেই আরাধনা করা হতো। কংসনারায়ণই প্রথম শারদীয়া পুজো করেন। কথিত আছে, রাজা কংসনারায়ণই সপরিবারে দুর্গাপুজোর অর্থাৎ সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, লক্ষী সহ দুর্গাপূজার প্রবর্তক। সেই মূর্তি ছিল একচালা। সিংহ ছিল ঘোড়ামুখী। বাকি মূর্তি গুলো ছিল কাঠের পুতুলের মত। এই মূর্তি এখন শুধুমাত্র কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে পাওয়া যায়। রাজা কংসনারায়ণের এই শারদীয়া পুজোকেই নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র জনপ্রিয় করে তোলেন। একই বছর নবকৃষ্ণদেবও শারদীয়া দুর্গোৎসব করেন। মানে ১৭৫৭ সালে। সেটাই উত্তর কলকাতার প্রথম দুর্গাপুজো। দক্ষিণ কলকাতায় শারদীয়া পুজোর ইতিহাস আরও প্রাচীন। আমরা বর্তমানে মাটিতে গড়া যে দুর্গা প্রতিমার আরাধানা করি সেটা কংসনারায়ণ ঘরানার।
কংসনারায়ণ ঘরানা:
বঙ্গে প্রচলিত দুর্গা পুজোর দুটি ঘরানা রয়েছে। বিষ্ণুপুর ঘরানা এবং কংসনারায়ণ ঘরানা। ইতিহাস বলে, রাজা কংসনারায়ণ বাংলায় জাঁকজমকপূর্ণভাবে দুর্গাপুজার প্রচলন করেন, যা আজ বাঙালিদের মধ্যে কিংবদন্তীর রূপ নিয়েছে। কংসনারায়ণ তাহেরপুরের রাজা হলেও সেকালের বাংলায় তিনি ছিলেন বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম। কংসনারায়ণের প্রবর্তিত রীতিতে লক্ষ্য করা যায় গণেশ ও কার্তিক নীচের দিকে অধিষ্ঠিত আর অন্যদিকে, সরস্বতী এবং লক্ষ্মী উপরের দিকে অবস্থান করে। এই রীতিতে প্রতিমার পিছনে অর্ধচন্দ্রাকার চালচিত্রের মধ্যে দশমহাবিদ্যার রূপ আঁকা হয়। কংসনারায়ণ গাঢ় হলুদ বর্ণের দেবী দুর্গার প্রতিমা প্রচলন করেন।
বিষ্ণুপুর ঘরানা:
এটা কংসনারায়ণের থেকেও প্রাচীন। ৯৯৭ সালে মল্ল রাজারা বিষ্ণুপুরে মাতৃ মূর্তি গড়ে দুর্গা পুজো শুরু করেন। রাজা জগৎমল্লের নির্দেশেই বিষ্ণুপুরের মৃন্ময়ী মাতার মূর্তি প্রথম নির্মিত হয়। বিশেষ রীতিতে নির্মিত দেবী মূর্তি বিষ্ণুপুর রীতির প্রতিমা বলে চিহ্নিত হয়। দেবী প্রতিমায় একই চালের মধ্যে উপরের দিকে অধিষ্ঠিত হন গণেশ এবং কার্তিক আর নীচের দিকে থাকেন লক্ষ্মী ও সরস্বতী। চালচিত্রে শিব এবং নন্দী-ভৃঙ্গিকে দেখা যায়।
(তথ্যঋণ: দুর্গাপুজো ও কিছু কথা সনৎ ঘোষ)