দশমীতে বিসর্জন নয়, মায়ের আগমন ঘটে বাংলার এই গ্রামে, কেন জানেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দশমীতে দুর্গা নিরঞ্জনের সাথে সাথেই মন খারাপের সুর দেখা যায় বাঙালিদের মধ্যে। কিন্তু, রায়গঞ্জ ব্লকের কমলাবাড়ি ২ নম্বর খাদিমপুরের মানুষ এই দিনেই আনন্দে মেতে ওঠেন। কেন জানেন? কারণ, দশমীর রাত থেকে শুরু হয় এই দেবীর পুজো। ইনি দেবী দুর্গার আরেক রূপ, বলাই চণ্ডী। পাঁচ দিন ধরে চলে এই পুজো। ২০০০ পরিবারের প্রায় ৮৫০০ জন বাসিন্দার যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় ওই পুজোর।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রায়গঞ্জের এই গ্রামের মানুষ বছরভর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন। বাংলা জুড়ে যখন বিষাদের সুর, তখন এই গ্রামে বয়ে যায় আনন্দ লহরী। কারণ দেবীর আগমন। দশমীর রাতে বোধন হয় দেবী বলাই চণ্ডীর। প্রাচীন রীতি মেনে হয় পুজো। এখানে দেবী চতুর্ভুজা। সিংহবাহিনী এই দেবী কিন্তু অসুর নাশিনী দুর্গা নন। তাঁর সঙ্গে বিরাজ করেন লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক, সরস্বতী।
সারা বছর ধরেই নিত্য পুজো হয় এই দেবীর। গ্রামবাসীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কমপক্ষে ৫০০ বছরের বেশি কিছু সময় ধরে এই পুজোর প্রচলন হয়ে আসছে। কালো কষ্টিপাথরে খোদাই করা বিগ্রহটির সারাবছরই পুজো হয়। এমনকী, মন্দিরকে জড়িয়ে পাকুড় গাছটি প্রথম থেকেই রয়েছে বলে দাবি গ্রামবাসীদের।
এই মন্দিরের পুরোহিত জানান, ৫০০ বছর আগে দশমীতে এই গ্রামে প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রচুর ফসল, ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। মারা যান বহু মানুষ। সেই থেকেই সমাজের মঙ্গল কামনায় বলাই চণ্ডী পুজো শুরু করেন গ্রামবাসীরা। রীতি অনুযায়ী প্রতিমা বিসর্জন না করে বট-পাকুড় গাছের প্রাচীন মন্দিরে রেখে দেওয়া হয়।
প্রতি বছর বিশ্বকর্মা পুজোর পরেরদিন পুরোনো দেবীর বিসর্জন হয়। তারপরেই মৃত্-শিল্পীদের প্রতিমা গড়ার বরাত দেওয়া হয়। বংশ পরম্পরায় মৃত্ শিল্পীরা সেই প্রতিমা নির্মাণ করেন। পুরোহিতরাও বংশ পরম্পরায় পুজো করে আসছেন। পুজোর ৫ দিন মঙ্গলযজ্ঞ হয়। এরপর দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের উৎসর্গ করা পাঠা, পায়রা মিলিয়ে ৫০০টি বলি হয়। পুজো উপলক্ষ্যে এক সপ্তাহ ধরে মেলা চলে। প্রসাদ হিসেবে ভক্ত ও গ্রামবাসীদের মধ্যে খিচুড়ি, মিষ্টি ও ফল বিলি করা হয়।