দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে বিস্তাকে সরিয়ে শ্রীংলাকে প্রার্থী করতে চলেছে BJP?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: দার্জিলিং লোকসভা আসনে এবার দেশের প্রাক্তন শীর্ষ আমলা তথা দেশের প্রাক্তন বিদেশ সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলাকে প্রার্থী করতে চলেছে বিজেপি?এরকমই জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
দার্জিলিং আসনে জেতাহারা বরাবর পাহাড়ের একটি বড় অংশের ভোটের উপর নির্ভর করে থাকে। দার্জিলিং, কালিম্পং, মিরিক, কার্শিয়াং মিরিকে পাহাড়ে যে প্রার্থী বেশি ভোট পান তিনি জেতেন। স্থানীয়দের বদলে বাইরে থেকে ‘পরিচিত নামে’র প্রার্থী এই আসনে দাঁড় করানো ৮০ দশকের পর থেকে শুরু হয়। ইন্দ্রজিৎ খুল্লার, যশবন্ত সিংহ, সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালি, রাজু বিস্তা শেষ সংযোজন। বিজেপি গতবার ভোটেও রাজু বিস্তার আগে দেশের জনপ্রিয় এক ধর্মগুরুর নাম এই আসনে ভেবে আলোচনা শুরু করেছিল। একাধিকবার পাহাড়ে এলেও শেষ অবধি তিনি দাঁড়াননি। এবার হর্ষবর্ধন শ্রীংলা’র নাম নিয়ে সেই জল্পনা শুরু হয়েছে। পাহাড়ের নেতারা জানান, দার্জিলিঙের আদি বাসিন্দা হিসাবে শ্রীংলার দার্জিলিং পাহাড়ে পরিচিতি রয়েছে। আত্মীয়েরা ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজনের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে।
বর্তমান সাংসদ রাজু বিস্তাকে সরিয়ে শ্রীংলাকে এবার বিজেপি প্রার্থী করতে চলেছে, এই জল্পনা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে রাজভবনের একটি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে হর্ষ বর্ধন শ্রীংলাকে কলাক্রান্তি গভর্নর এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত করেন বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। ইউনাইটেড স্টেটস ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ ফোরামের সদস্যদের উপস্থিতিতে এই সম্মান হাতে তুলে দেওয়া হয়। এই পুরষ্কারটিকে দার্জিলিংয়ের জনগনের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন হর্ষবর্ধন শ্রীংলা। পাশাপাশি পাহাড়ের পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়নে ১ লক্ষ টাকা দান করারও অঙ্গীকার করেন। এরপরই জল্পনা শুরু হয় তাহলে কি এই প্রাক্তন আমলা লোকসভা নির্বাচনে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন?
অবসরপ্রাপ্ত শীর্ষ আমলা বা প্রাক্তন কূটনীতিকদের উপর কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকারের বাড়তি ভরসার কথা প্রায় কারও অজানা নয়। বিজেপির হাত ধরে অতীতে দেশের একাধিক আমলা ও কূটনীতিক রাজনীতিতে এসেছেন। তাঁর জ্বলন্ত উদাহরণ বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এই প্রাক্তন আইএফএস অফিসার দীর্ঘকাল কূটনীতিক হিসেবে দেশের হয়ে কাজ করেছে। এই তালিকায় অন্যতম উজ্জ্বল নাম কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী ভিকে সিংহও। প্রাক্তন ভারতীয় সেনাপ্রধানকে কেন্দ্রীয় সড়ক ও পরিবহণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইন্ডিয়ান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেওয়ার পর থেকে শ্রীংলা ভারতীয় কূ়টনীতিকে সঠিক দিকে পরিচালিত করেছেন। তাই আগামী দিনে বিজেপি যদি তাঁকে রাজনীতিতে নিয়ে আসে, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিঙের সঙ্গে নাম জড়িয়ে শ্রীংলার। কিন্তু তিনি কখনও দার্জিলিঙে থাকেননি। স্বাভাবিকভাবে হিন্দি, ইংরেজি ও একাধিক বিদেশি ভাষার পাশাপাশি নেপালিতেও কথা বলতে দক্ষ তিনি। দার্জিলিং ও সিকিমে শ্রীংলা পরিবারের আলাদা সম্মান রয়েছে। তাঁর বাবা সিকিমের বৌদ্ধ এবং মা হিন্দু নেপালি। গোর্খারা হর্ষবর্ধনকে আলাদা চোখে দেখেন। কারণ গোর্খা সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে হাতে গোণা কয়েকজন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের এই পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ২০০৯ সাল থেকে দার্জিলিং আসনটি ধরে রেখেছে বিজেপি। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে যুগলবন্দিতে ২০০৯-এ যশবন্ত সিং, ২০১৪-এ সুরিন্দর সিং অহলুওয়ালিয়া ও ২০১৯-এ রাজু বিস্তা বিজেপির টিকিটে দার্জিলিং থেকে জয়ী হয়েছেন। কিন্তু এদের একজনও দার্জিলিঙের ভূমিপুত্র নন। একাধিকবার প্রার্থী চয়ন নিয়ে ‘বহিরাগত’ প্রশ্ন উঠেছে। আসন্ন ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সমর্থন এই পাহাড়ি শহরে ধাক্কা খেতে পারে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সেই কারণে শ্রীংলাকে প্রার্থী করে বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। যদিও বিজেপির তরফে এখনও এই নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। সবটাই জল্পনার স্তরে রয়েছে।