কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা – মিরিটির ‘পল্টু’ জিতেছিল সারা ভারতের হৃদয়
চলে গেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। অবসান হল এক রাজনৈতিক অধ্যায়ের। করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তারপর সেরিব্রাল হ্যামারেজ। ভেন্টিলেশনে ছিলেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি। এখন তিনি পাড়ি দিয়েছেন না ফেরার দেশে। মৃত্যুকালে ওনার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
কীর্ণাহার থেকে রাইসিনা হিলসের দূরত্ব সতেরশো কিলোমিটারের বেশি। এই সুদীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পল্টুর সময় লেগেছে পঞ্চাশ বছর। অসংখ্য ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে তার পথ চলা। কোন মন্ত্রবলে গ্রামের মেঠো পথ পাড়িয়ে রাইসিনা হিলসের দরজায় পৌঁছে যাওয়া ? উত্তর একটাই, অধ্যবসায়।
বাবা কামদাকিঙ্কর মুখোপাধ্যায় স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। তারপর জেল থেকে ছাড়া পেয়ে বাকি জীবনটা কাটিয়েছেন মিরাটির বাড়িতেই। ছোট্ট দুটো ঘর। একান্নবর্তী পরিবার। স্কুলের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছেলেটি ভর্তি হয় কলকাতার কলেজ। ছুটি পেলেই চলে আসত কীর্ণাহারের বাড়িতে। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় টপকে শিক্ষকতার জীবন। স্কুলে কিছুদিন শিক্ষকতা করে তারপর কলেজ। সেখান থেকেই রাজনীতির হাতেখড়ি। তারপর নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে কলকাতা থেকে দিল্লির রাজনীতিতে প্রবেশ। মন্ত্রিত্ব থেকে রাইসিনা হিল।
রাজনীতির আঙিনায় তাঁর পরিচিতি চাণক্য নামে। আর কংগ্রেসের ঘরে তিনি ক্রাইসিস ম্যানেজার। পঞ্চাশ বছরের রাজনৈতিক জীবনের শুধু সাফল্যের দিকগুলেই সামনে উঠে আসে। কিন্তু এই দীর্ঘ পথ যে কতটা কঠিন ছিল, সেটা অনেকেরই অজানা। অজয় মুখোপাধ্যায়ের হাত ধরে রাজনীতির শুরু। তারপর ইন্দিরা গান্ধীর স্নেহধন্য মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় মানুষটাকেও কংগ্রেস থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল।
সামান্য কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে নতুন দল করলেও তা হালে পানি পায়নি। ফের কংগ্রেসে ফেরত। গান্ধী পরিবারের আস্থাভাজন হওয়ার জন্য চূড়ান্ত অধ্যবসায়। এই ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়েই নিজের জীবনের চলার পথটাকে খুঁজে নিতে হয়েছে তাঁকে। আর এই খুঁজতে খুঁজতেই রাইসিনা হিলের দরজায় পৌঁছে যাওয়া।
প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে বঙ্গ তথা জাতীয় রাজনীতির আঙিনায় যবনিকা পতন এক যুগের।