দেবী দুর্গার সাথে জগদ্ধাত্রীর তফাৎ কী? সিংহবাহিনী দেবীই কি অধুনা জগদ্ধাত্রী?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বহু প্রাচীন দেবী দুর্গা। দুর্গাপুজো বছরে তিনবার হয়। বসন্তকালে বাসন্তি দুর্গা। শরৎকালে শারদ দুর্গা। আর হেমন্তকালে হৈমন্তিক দুর্গা অর্থৎ জগদ্ধাত্রী পুজো। পঞ্চদশ বা ষোড়শ শতকের স্মার্তপণ্ডিত শূলপাণি তাঁর ‘কালবিবেক’ গ্রন্থে কার্তিকমাসে জগদ্ধাত্রী পুজোর কথা উল্লেখ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে চতুর্দশ শতকের অর্বাচীন দেবী জগদ্ধাত্রী। সিংহবাহিনী মাতৃমূর্তি জগৎধারিনী, শান্ত প্রসন্নময়ী, রজো-তমো-সত্ত্বগুণের প্রতীক।
কার্তিকেহমলপক্ষস্য ত্রেতাদৌ নবমেহহনি।
পূজয়েত্তাং জগদ্ধাত্রীং সিংহপৃষ্ঠে নিষেদুষীম।।
স্মৃতিসাগরগ্রন্থে কার্তিকমাসে উমাপুজোর কথা বলা হয়েছে। মহামহোপাধ্যায় পঞ্চানন তর্করত্ন মনে করেন কেনোপনিষদে উল্লিখিত উমা-হৈমবতীই হলেন জগদ্ধাত্রী। ষোড়শ বা সপ্তদশ শতকের তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশের লেখা জগদ্ধাত্রীর ধ্যানমন্ত্রে দেবীর রূপটি সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে। দেবী ত্রিনেত্র, চতুর্ভূজা, দুটি বামহাতে যথাক্রমে শঙ্খ আর ধনুক। ডানহাত দুটিতে চক্র ও তীর। দেবীর বাহন সিংহ। ললিতাসনে উপবিষ্ট। দেবী করিন্দ্রাসুরকে নিহত করেছিলেন। তাই পদতলে হাতির মস্তকুপদেবীর এইরূপ বর্ণনানুযায়ী জগদ্ধাত্রীর প্রতিমাগুলি আজও নির্মিত হচ্ছে। আবার কোথাও কোথাও জয়া বিজয়া। কোথাও নারদ ও বশিষ্ঠমুনি। অনেক মূর্তিতে চালির দুপাশে চামর হাতে উড়ন্ত জোড়া বিদ্যাধরী।
জগদ্ধাত্রীকে দেবী দুর্গার অবতার বলা হয়। দুর্গাপুজোর মতোই কুমারীপুজো সিঁদুরখেলা ও বিজয়া দশমী রয়েছে। এছাড়া দুর্গা যেমন মহিষাসুরকে বধ করেছিলেন, জগদ্ধাত্রী তেমনি করিন্দ্রাসুরকে নিহত করেছিলেন। অনেকেই বলেন দেবীদুর্গার অপর নাম জগদ্ধাত্রী। তবে দুর্গার সঙ্গে জগদ্ধাত্রীর কিছুক্ষেত্রে তফাৎ আছে। জগদ্ধাত্রীপুজো হয় দুদিনে আর দুর্গাপুজো চারদিনের। জগদ্ধাত্রী রণরঙ্গিনী যুদ্ধদেবী নন, তিনি প্রসন্ন মাতৃমূর্তি। দুর্গাপুজো রাজসিক উৎসব। দুর্গা মহিষাসুরমর্দিনী রূপেই পূজিত। কিন্তু জগধাত্রী প্রসন্নময়ী মাতৃ রূপে সাত্ত্বিক পুজোর উদাহরণ।
কথিত আছে, জগদ্ধাত্রীপুজোর উদ্ভবের প্রেক্ষাপটেও দেবী দুর্গার নিবিড় যোগ। নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় একবার মুর্শিদাবাদে নবাবের কোষাগারে সময় মতো রাজস্ব দিতে না পারার জন্য কারারুদ্ধ হন। সেই সময়টা ছিল দুর্গাপুজো। তখন দেবীদুর্গা রাজাকে স্বপ্নাদেশে বলেন চিন্তার কিছু নেই। কার্তিক নবমীতে তাঁকে জগদ্ধাত্রী রূপে আরাধনা করলেই চতুর্বর্গ লাভ করবেন।