লকডাউনের জেরে ২৩ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক ফিরেছেন হেঁটেই
পেটে দানাপানি নেই। সঙ্গে দোসর টানা হাঁটার নিদারুণ ক্লান্তি। প্রবল গরমে ফলস্বরূপ রাস্তায় ঘটেছে একাধিক মৃত্যুর ঘটনা। কিন্তু ঠিক কত পরিযায়ী শ্রমিক এভাবে শয়ে শয়ে মাইল হেঁটে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন, তার কোনও হিসেব এতদিন মেলেনি। সদ্য এক সমীক্ষা রিপোর্টে ধরা পড়েছে সেই পরিসংখ্যানের ছবি। আর তাতেই দেখা যাচ্ছে, লকডাউনের কারণে কাজ হারিয়ে অন্তত ২৩ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক বাড়ি ফিরেছেন পদব্রজেই।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা স্বীকৃত সমীক্ষা-সংস্থা ‘গাঁও কানেকশন’-এর রিপোর্টেই উঠে এসেছে এই চিত্র। দেশের ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের ১৭৯টি জেলার ২৫ হাজার ৩০০ পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে মুখোমুখি কথা বলে তৈরি হয়েছে এই রিপোর্ট। এজন্য সংস্থার সমীক্ষকরা ৩০ মে থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। সমীক্ষকদের তথ্য-পরিসংখ্যান আবার যাচাই করেছে দিল্লির সেন্টার ফর ডেভেলপিং সোসাইটিজ নামক দিল্লির অপর একটি সংস্থা।
সমীক্ষা রিপোর্ট বলছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মস্থল থেকে হেঁটে বাড়ি ফিরতে ২ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত সময় লেগেছে। কেউ ৭০০ কিলোমিটার পর্যন্ত রাস্তাও হেঁটেছেন এজন্য। গোটা রাস্তায় অনাহার বা অর্ধাহারে থাকতে হয়েছে বহু শ্রমিককে। সহ্য করতে পুলিসের অত্যাচার। কখনও স্থানীয় মানুষের সহানুভূতি জোটেনি অনেকের। যারা ফিরেছেন তাঁদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ শ্রমিক একাই গ্রাম ছেড়ে বাইরে কাজে গিয়েছিলেন। কিন্তু কর্মস্থল থেকে মালিক বা সংস্থার তাড়া খেয়ে ৩৯ শতাংশ শ্রমিক স্ত্রী-সন্তানদেরও হাঁটিয়ে নিয়ে ফিরতে বাধ্য হয়েছে। নিজের রাজ্যের মধ্যে কর্মস্থল থেকে হেঁটে ফিরেছেন এমন শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ২২ শতাংশ। এই দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে ভিন রাজ্য থেকে আসা ১৩ শতাংশ শ্রমিককে।
পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে যাঁরা ভাগ্যবান, তাঁদের অবশ্য ট্রেন, বাস বা অন্যান্য পরিবহণের সুবিধা জুটেছে। তবে সমীক্ষা বলছে, ১৮ শতাংশ শ্রমিক বাসে ফিরতে পেরেছেন। ১২ শতাংশের কপালে জুটেছে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন। দূরপাল্লার ট্রাকের চেপে পৌঁছেছেন অন্তত ৮ শতাংশ শ্রমিক বা তাঁদের পরিবার। পকেটে রেস্ত থাকায় প্রাইভেট কার বা ট্যাক্সি ভাড়া করে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন ১০ শতাংশ। বাইক বা স্কুটারের উপর ভরসা করেছেন ৩ শতাংশ। একইভাবে মাইলের পর মাইল সাইকেলে চেপে চলে এসেছেন আরও ৩ শতাংশ। গাড়ি, বাস বা অন্যান্য পরিবহণের সুবিধা মিলিয়ে বাকি ৭ শতাংশ শ্রমিক গ্রামে ফিরতে সক্ষম হয়েছেন।