কোচবিহারে অনন্ত রায়ের নকল রাজবাড়িতে তল্লাশি পুলিশের, আটক কয়েকজন
ফের খবরে এলেন গ্রেটার কোচবিহারের একটি গোষ্ঠীর নেতা অনন্ত রায়। তিনি অবশ্য তাঁর ভক্তদের কাছে “মহারাজ” নামে পরিচিত। সোমবার গভীর রাত থেকে শুরু করে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত তাঁর স্বঘোষিত রাজবাড়িতে তল্লাশি চালালো পুলিশ। আটক করা হয়েছে অনন্ত মহারাজের একটি গাড়ি। এছাড়া বেশ কয়েক জন গ্রেটার কোচবিহার সমর্থককে পুলিশ আটক করে।
অনন্তপন্থীদের দাবি, বিজেপি সমর্থক হওয়ার জন্য তাঁকে বারবার হেয় করছে পুলিশ। তাঁকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিতে চাপ দেওয়া হয়। যদিও গ্রেটারের অপর গোষ্ঠী এই তত্ত্ব মানতে নারাজ।
অনন্ত মহারাজকে নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু না। তিনি নিজেই নিজেকে কোচবিহারের “মহারাজ” বলে ঘোষণা করেছিলেন। কোচবিহার শহরের অদূরে চকচকায় তৈরি করেছিলেন রাজবাড়ির আদলে বিরাট প্রাসাদ। কী ছিল না সেই প্রাসাদে? পাইক, বরকন্দাজ, সিংহাসন , হস্তিমুণ্ড খচিত প্রবেশদ্বার —সবই। অভিযোগ, গ্রামের সাধারণ মানুষের মগজধোলাই করে টাকা সংগ্রহ করে তিনি এই ভুয়ো রাজবাড়ি বানিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ একাধিক ধারায় মামলা করে। সেই কেসগুলির নিষ্পত্তি এখনও হয়নি। পুলিশ যে কোনো সময় তাঁকে গ্রেফতার করতে পারে এই আশঙ্কায় তিনি বাংলা থেকে পালিয়ে অসমে লুকিয়ে আছেন। রাজবংশী কল্যাণ মঞ্চের তরফে তাঁকে গ্রেফতারের দাবি জানানো হয়। বিভিন্ন গ্রন্থ প্রকাশ করে অবৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়ে রাজবংশী কৃষ্টি সংস্কৃতির ক্ষতি করছেন অনন্ত। এই অভিযোগও তোলা হয়। পাশাপাশি, সহজ সরল রাজবংশীদের মিথ্যা তথ্য ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা তোলার অভিযোগ তো ছিলই।
যদিও শেষবার তাঁকে প্রকাশ্যে দেখা গিয়েছিল ২০১৯ সালে শিলিগুড়ির কাওয়াখালিতে প্রধানমন্ত্রীর সভায়। কিন্তু প্রথমে তিনি মঞ্চে উঠতে পারেননি। নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে রোদেই দাঁড় করিয়ে রাখে। শেষমেশ মঞ্চে উঠলেও বক্তৃতা রাখার সুযোগ বা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘেঁষার সুযোগ কোনোটাই মেলেনি।
কোচবিহার-২ ব্লকের বড়গিলায় অবস্থিত ভুয়ো রাজবাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ একটি বহু মূল্যবান গাড়ি আটক করে। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজন গ্রেটার সমর্থককেও গ্রেফতার করে পুলিশ। একই সঙ্গে প্রচুর ‘বে-আইনি’ জিনিসপত্র ওই বাড়ি থেকে পাওয়া যায় বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
বিষয়টি নিয়ে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশনের নেতা তথা রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি চেয়ারপার্সন বংশীবদন বর্মন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ভেক ধরে রাজা হওয়া যায় না, রাজা হওয়ার জন্য সমর্থন প্রয়োজন হয়। কোচবিহার জেলা সার্বভৌমত্বের। আইন কোন পথে চলবে তা আইনি ঠিক করুক। যদি বেআইনি কাজকর্মের সাথে কেউ জড়িত থাকে তিনি অবশ্যই শাস্তি পাবেন।”
যদিও অনন্ত রায়ের পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। জলপাইগুড়িতে মঙ্গলবার বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, “অনন্ত মহারাজ শ্রদ্ধেয় নেতা। তিনি অনেক দিন ধরেই আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাই যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজত্বে বিরোধীদের উপর দমনপীড়ন চালানো হচ্ছে, কোচবিহারে অনন্ত মহারাজের বাড়ি তল্লাশির নামেও তাই হয়েছে। আমি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করছি।”