নিরলস গবেষকের আড়ালে কি ঢাকা পড়েই রইলেন শিক্ষক যদুনাথ সরকার?
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: ইতিহাসের নিবিড় গবেষণা আর যদুনাথ সরকার, এদেশে প্রায় সমার্থক। কিন্তু গবেষণার ভারে কী আদত মানুষটা চাপা পড়ে রইলেন? যদুনাথ ছিলেন জাত মাস্টারমশাই, অধ্যায়নকে সার্বিক উপায়ে পুষ্ট করে তোলাই ছিল তাঁর ভাবনার বিষয়। শিক্ষাকে উদার করার প্রয়োজনীয়তা বুঝেছিলেন তিনি। তবে শিক্ষার সর্বান্তকরণের ক্ষেত্রেও গুণগত মান বজায় রাখার পক্ষপাতী ছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ তাঁর অচলায়তন নাটকটি যদুনাথ সরকারকে উৎসর্গ করেছিলেন, যদুনাথ সত্যি সত্যি শিক্ষাকে অন্য আঙ্গিকে দেখেছেন, চিরাচরিত মোড়কের বাইরে। ইতিহাস লেখার জন্য নিজেকে গড়তে গড়তে এভাবেই জন্মেছিল তাঁর শিক্ষাবোধ। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিক্ষার মূল স্রোতে যত বেশি সংখ্যক পড়ুয়াকে আকর্ষণ করা যায় ততই দেশের মঙ্গল। অশিক্ষিত, বিচ্ছন্ন মানুষকে গড়ে তোলার উপায় হল বিদ্যা বিলি। তাতেই দেশের হিতকার্য সাধিত হবে।
যদুনাথ পটনা কলেজে অধ্যাপনা করার সময়, ছাত্রদের ইতিহাস বিষয়ে আগ্রহী করে তুলতে পড়াশোনার কাজে মাতৃভাষাকে স্বাগত জানালেন। ভার্নাকুলার সেমিনারের আয়োজন করলেন। ‘মডার্ন রিভিউ’ পত্রিকার ‘কনফেশানস অব অ্যা হিস্ট্রি টিচার’ আর ‘দ্য ভার্নাকুলার মিডিয়াম: ভিউজ অব অ্যান ওল্ড টিচার’ শীর্ষক প্রবন্ধ দুটি, তার প্রমাণ। সাংসারিক লোক ও শ্রমজীবীদের অবসরকালীন শিক্ষার জন্য সরল ভাষার প্রচলনে ব্রতী হলেন। লেখার জন্য দীর্ঘ সমাস, কঠিন সংস্কৃতমূলক শব্দ বাদ দেওয়া শুরু হল। যে’সব বিদেশি শব্দ সহজে বাংলায় চলে গিয়েছে সেগুলির বঙ্গানুবাদ করার দরকার নেই। লেখার পর সম্পাদক সংশোধন করতে পারবেন। শিক্ষিত পাঠকের কাছে জ্ঞান ও তথ্য পৌঁছে দেওয়াই মূল উদ্দেশ্য, এ ভাবনার জন্ম দিয়েছিলেন তিনিই।