একনজরে সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের নবম দিন
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে তপ্ত হয় লোকসভার অধিবেশন। সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে বুধবারের ঘটনার প্রতিবাদের জেরে তৃণমূল কংগ্রেস সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়ন সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের বাদ বাকি সময়ের জন্য রাজ্যসভা থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। এছাড়াও কংগ্রেসের পাঁচ সাংসদ-সহ ১৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সাসপেন্ড হওয়া ৫ কংগ্রেস সাংসদ হলেন দীন কুরিয়াকোস, হিবি ইডেন, জ্যোতিমানি, রাম্য হরিদাস এবং টিএন প্রথাপন। এছাড়াও সাসপেন্ড করা হয়েছে কানিমোঝি, মানিককাম, পিআর নটরাজন, ভিকে শ্রীকান্তম, বেনি বেহান, কে সুব্রহ্মণ্যম, এসআর প্রতিবান, এস ভেঙ্কটেশন এবং মহম্মদ জাভেদকে।
অসংসদীয় আচরণের অভিযোগে ওই ১৪ সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে এদিন দফায় দফায় মুলতুবি হয়ে যায় লোকসভার অধিবেশন। অধিবেশন শুরুর ১ ঘণ্টা পর ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদেরা। সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘন নিয়ে তাঁরা আলোচনার দাবি জানান। ২৮টি নোটিস নিয়ে সরব হন তাঁরা। ওই নোটিসগুলি অনুমোদন করেননি ধনখড়। তার পরই ওয়েলে নেমে বিক্ষোভ দেখান বিরোধী সাংসদেরা। বিরোধীদের এ হেন আচরণের নিন্দা করে চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখার শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কারণ হিসাবে “অনিচ্ছাকৃত আচরণ” এবং “অসদাচরণ” উল্লেখ করেছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জবাব তলব করেছেন বিরোধীরা। অন্য দিকে, সংসদে নিরাপত্তা লঙ্ঘনের ঘটনায় আট নিরাপত্তারক্ষীকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
বিরোধী সাংসদরা বৃহস্পতিবার রাজ্যসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েনকে সাসপেন্ড করা এবং নিরাপত্তা লঙ্ঘনকারী দুই ব্যক্তির সংসদে প্রবেশের অনুমোদনকারী বিজেপি সাংসদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রের নিন্দা করেছেন।
রাজ্যসভা থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ দোলা সেন স্থগিতাদেশ নিয়ে সরকারকে নিন্দা করেছেন, এবং বলেছেন ও’ব্রায়েন যখন লোকসভার নিরাপত্তা লঙ্ঘনের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের দাবিতে হাউসের ওয়েলে গিয়েছিলেন তখন তিনি তাঁর অধিকারের মধ্যে ছিলেন। “এটা জাতীয় নিরাপত্তার কথা, বিরোধী দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব এই বিষয়টি উত্থাপন করা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যদি সংসদে বক্তব্য দিতেন, তাহলে এই পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। ইস্যুটি উত্থাপন করা বিরোধী দলে আমাদের অধিকার, তাই আমরা ওয়েলের কাছে গিয়ে স্লোগান দিই, যদি তারা আমাদেরকে সাসপেন্ড করতে চায় তাহলে সেটা করতে পারে… ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’।
কংগ্রেস সাংসদ প্রমোদ তিওয়ারি বলেছেন, চেয়ারম্যানের উচিত তার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা। “সাংসদরা যদি আওয়াজ না তোলেন, তাহলে লাভ কী? একজন বিজেপি সাংসদের মাধ্যমে দু’জন লোক এসে গণতন্ত্রের মন্দিরের নিরাপত্তা লঙ্ঘন করেছে। সেটা স্মোক বোমা হোক বা রঙিন বোমা… একটি বোমা হাউসে পৌঁছেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এমন পরিস্থিতিতে, আমরা যদি রাজ্যসভায় আলোচনার দাবি করি, এবং মন্ত্রীর কাছ থেকে একটি বিবৃতি দাবি করি, আমি মনে করি এটি একটি বৈধ কারণ। আমি সরকারকে দোষ দিই ( ডেরেক ও’ব্রায়েনের সাসপেন্ডের জন্য), আমরা চাই চেয়ারম্যান পুনর্বিবেচনা করুন। তার সিদ্ধান্ত। এটা জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়।”
ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআই) সাংসদ বিনয় বিশ্বম বলেছেন, সাসপেন্ড করা “অনাকাঙ্ক্ষিত, অগণতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” তিনি বলেন, “পার্লামেন্টের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ না করা একটি ব্যর্থ সরকার এখন তার নিজস্ব উপায়ে সংসদীয় কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে। আমরা এটাকে জনগণের আদালতে নিয়ে যাব” । তাঁর কথায় “একটি সতর্কবার্তা ছিল যে এই হামলা হতে পারে। সরকার কী সতর্কতা অবলম্বন করেছে? কেন বিজেপি সাংসদকে পাস দিয়েছেন? বিজেপি এমপির বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা নিয়েছে? “বিজেপি সাংসদকে সুরক্ষিত রাখা হয়েছে এবং যে এমপি এই রাজনৈতিক প্রশ্ন তুলেছেন। কার্যক্রম সাসপেন্ড করা হয়েছে। আমরা স্থগিত টিএমসি এমপির সাথে ঐক্যবদ্ধ আছি।”
সিপিআই-এর পি সন্তোষ কুমার বলেছেন, “আমরা সাসপেনশন মেনে নেব না। এটা গণতন্ত্রের নীতির পরিপন্থী এবং স্বৈরাচারের চিহ্ন। পাস দেওয়ার অপরাধী সাংসদ এখনও লোকসভায় রয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেখানে একজন যারা প্রতিবাদ করে তাকে সাসপেন্ড করা হয়।”