ভর্তুকি পেতেও আধার আবশ্যিক এবার ডাকঘরে

আধার নম্বর যোগ করার উদ্দেশ্যে বদলে ফেলা হয়েছে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা ও স্বল্প সঞ্চয়ের আবেদনপত্র বা ফর্মের ‘ফরম্যাট’ও।

August 14, 2020 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি কিংবা একশো দিনের কাজের টাকা। অথবা বিভিন্ন প্রকল্পে সরকারের আর্থিক সাহায্য। ব্যাঙ্কের পাশাপাশি ‘ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার’-এর যাবতীয় পরিষেবা মিলবে এবার ডাকঘরেও। দেশের ডাক পরিকাঠামো কাজে লাগিয়ে প্রত্যন্ত এলাকার গ্রাহকদের সুরাহা দিতে এই উদ্যোগ মোদি সরকারের। সেই কারণেই ডাকঘরে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে এবার আধার নম্বর দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পেও টাকা রাখলে অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে আধার। এই মর্মে ডাকঘরের সবক’টি রাজ্য সার্কেলকে নির্দেশ পাঠিয়েছে দিল্লি। আধার নম্বর যোগ করার উদ্দেশ্যে বদলে ফেলা হয়েছে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা ও স্বল্প সঞ্চয়ের আবেদনপত্র বা ফর্মের ‘ফরম্যাট’ও।

পোস্ট অফিসে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে গ্রাহকদের একটি ফর্ম পূরণ করতে হয়। সেই ফর্মে আধার নম্বর লেখার নির্দিষ্ট জায়গা রয়েছে। আধার নম্বরের সংযোগ ঘিরে দেশজুড়ে বিতর্কের পর সেই ঘর বা কলাম পূরণে এতদিন কড়াকড়ি করেনি ডাক বিভাগ। ফর্মেই উল্লেখ রয়েছে, আধার নম্বর না থাকলে, তার পরিবর্তে গ্রাহকের পরিচয় এবং ঠিকানার প্রমাণ স্বরূপ পাসপোর্ট, ভোটার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ১০০ দিনের কাজের জবকার্ড সংক্রান্ত নথি বা ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্ট্রার অফিসের চিঠি জমা করতে হয়। সেই সঙ্গে প্যান কার্ড সংক্রান্ত নথিও জমা করতে বলা হয়।

কিন্তু গত ১১ আগস্ট দিল্লি থেকে প্রতিটি সার্কেলকে জানানো হয়েছে, শুধু আধার নম্বর সংযোগে নতুন একটি ফর্ম পূরণ করতে হবে গ্রাহকদের। সেই ফর্মটি কেমন হবে, তার একটি আদলও পাঠানো হয়েছে রাজ্যগুলিকে। ডাকঘরে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে গেলে কিংবা পিপিএফ, মান্থলি ইনকাম স্কিম, ন্যাশনাল সেভিংস স্কিম, রেকারিং ডিপোজিট, ফিক্সড বা টার্ম ডিপোজিট, সুকন্যা সমৃদ্ধি প্রকল্প বা কিষাণ বিকাশপত্র কিনলে গ্রাহকদের বাধ্যতামূলকভাবে পূরণ করতে হবে ওই ফর্ম।

ডাক বিভাগের পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলের চিফ পোস্টমাস্টার জেনারেল মারভিন আলেকজান্ডার বলেন, ‘যাঁরা ইতিমধ্যেই পোস্ট অফিসে সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলেছেন বা স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে টাকা রখেছেন, তাঁদের নতুন করে আধার নম্বরের জন্য ফর্ম পূরণের কথা বলা হয়নি। পরবর্তী পর্যায়ে যাঁরা আবেদন করবেন, তাঁদের জন্য এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

কিন্তু প্রশ্ন হল, কেন নতুন করে গ্রাহকের আধার নম্বর নেওয়ার উদ্যোগ শুরু হল? ডাক বিভাগের কর্তারা বলছেন, ‘রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সহ সাধারণ মানুষ সরকারি প্রকল্পগুলির যে সুবিধা (ডিরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার) পান, সেগুলি কেন্দ্রীয় সরকার দেয় ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া বা এনপিসিআইয়ের মাধ্যমে। অর্থাৎ সরাসরি সাধারণ মানুষের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসে। এবার সেই সুবিধাগুলি গ্রাহকরা পোস্ট অফিসের মাধ্যমে পাবেন।’

দেশজুড়ে এই মুহূর্তে দেড় লক্ষের বেশি পোস্ট অফিস রয়েছে। কোর ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু হয়নি বহু প্রত্যন্ত গ্রামে। কিন্তু গ্রামীণ ডাকসেবক স্তর পর্যন্ত পোস্ট অফিসগুলিতেও স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প খোলার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। ডাক ব্যবস্থার এই বিশাল পরিকাঠামোকে কাজে লাগিয়ে এবার বিভিন্ন সরকারি পরিষেবা সেভিংস অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে দিতে চাইছে সরকার। ফলে যেখানে সরকারি বা বেসরকারি ব্যাঙ্ক পরিষেবা নেই, সেখানে নাগালের মধ্যেই সেই সুযোগ পাবেন সাধারণ মানুষ। একশো দিনের কাজের টাকা থেকে শুরু করে যে কোনও পেমেন্ট মিলবে ডাকঘরে। এনপিসিআইয়ের মাধ্যমে অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে গ্রাহককে সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করতে সাহায্য করে আধার নম্বর।

ডাকঘরেও সেই পরিষেবা দিতে আধার সংযোগের উদ্যোগ নিয়েছে যোগাযোগ মন্ত্রক। তবে যাঁরা ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্কের মাধ্যমে সরকারি প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা পান, তাঁরা ইচ্ছে করলে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে সেই পরিষেবা নাও নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে গ্রাহক কী চান, তা জানাতে হবে নতুন ফর্মে। যদি কেউ ডাকঘরেই টাকা নিতে চান, সেকথাও জানাতে হবে ওই ফর্মেই।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen