বড়দিনের আলোয় সেজে উঠেছে বো ব্যারাক, প্রস্তুত ওয়াইন-ফ্রুট কেক
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: প্রতি বছর বড়দিনের সময়ে প্রাণ ফিরে পেয়ে জেগে ওঠে কলকাতা শহরের ব্যস্ত অফিসপাড়ার মধ্যে থাকা এই একটুকরো এলাকা। যে জায়গার পোশাকি নাম বো ব্যারাক। বড়দিনে এই একচিলতে গলিতে নেমে আসেন ঈশ্বরপুত্র। রাস্তাজোড়া আলোর সাজে, বাড়িতে বানানো কেক পেস্ট্রি ওয়াইনের স্বাদে, যিশুকে স্বাগত জানায় বো ব্যারাক।
এবছরও ব্যারাকের বাসিন্দারা আকাশ একপ্রকার ঢেকে দিয়েছেন রঙিন আলোয়। দেওয়ালজুড়ে বোর্ডে লিখেছেন ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’, ‘মেরি ক্রিসমাস’। কয়েকজন রাস্তার মাঝে জায়ান্ট স্ক্রিন বসানোর কাজ করছিলেন। গান বাজিয়ে পরীক্ষা করে নেওয়া হচ্ছিল সাউন্ড। ক্রিসমাস ক্যারোলের সুরে কাজের মাঝেই অ্যাংলো ইন্ডিয়ানরা কোমর সামান্য দুলিয়ে নিচ্ছিলেন। লাল বাড়িগুলির দেওয়ালে ঝোলানো হয়েছে মোমো-নুডলসের দামের তালিকা। এই বাড়িগুলির সিঁড়ি বেয়ে উঠলে পাওয়া যাবে বাড়িতে তৈরি (হোম মেড) ওয়াইন আর ফ্রুটস কেক। তার সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে ব্যারাকজুড়ে। এই পাড়ায় ঢুঁ দিয়ে সাহেবি কায়দায় ২৫ ডিসেম্বরের রাতে ফ্রুট কেক আর ওয়াইনে চুমুক দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাঙালি। সেই ভিড়ের জন্য অপেক্ষা করছে লাল বাড়ির পাড়া বো ব্যারাক।
‘মিউজিক্যাল নাইট’-এ ব্যারাকের যুবকদের নিজস্ব ব্যান্ডের পারফরম্যান্স থাকে। আর জড়ো হয় বাচ্চারা। পথশিশুদের মুখে খাবার তুলে দেন ব্যারাকের অধিবাসীরা। ২৪ তারিখ ‘মাস’। সন্ধেবেলায় স্লেজে চড়ে এসে উপস্থিত হন সান্তা ক্লজ, উপহার দিয়ে যান শিশুদের। পার্ক স্ট্রিটের সাহেবিয়ানার পাশাপাশি এই মহল্লার মাটিছোঁয়া উৎসবের স্বাদ পেতে ভিড় জমায় কলকাতা।
এখানে দু’ধরনের ওয়াইন খুব বিখ্যাত। জিঞ্জার (আদা) ও গ্রেপস (আঙুর)। বো ব্যারাকের মুখে জ্যাকেট আর জিনস পরে কাঁধে একটি ব্যাগ নিয়ে বসে ছিলেন সাবরিনা গ্রাহাম। ‘ওয়াইন কোথায় পাওয়া যাবে?’ প্রশ্নের উত্তরে সাহেবি ইংরেজিতে বললেন, ‘বাড়িতে আছে। আপনার লাগবে?’ সাবরিনার বয়স হয়েছে। একটু খুঁড়িয়ে হাঁটেন। ‘কতদিন হল ওয়াইন তৈরি করছেন?’ উত্তর দিতে খানিক ভাবলেন। শুরুর দিন ঠিক মনে করতে পারেন না সাবরিনা। বললেন, ‘অনেক বছর। বংশপরম্পরায় দেখে আসছি। এগুলি গোয়ানিজ রেসিপিতে তৈরি। বাপ-ঠাকুরদার কাছ থেকে শেখা। এখানে কিন্তু কোনওরকমের অ্যালকোহল জাতীয় কিছু যোগ করা হয় না। যেহেতু আদা আর আঙুর দিয়ে তৈরি তাই একরকম সুমিষ্ট গন্ধ।’ তিনি জানালেন, ওয়াইন সারাবছরই পাওয়া যায়। তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় ২১ দিন। আর কেক বলতে শুধুমাত্র ফ্রুট কেক। বললেন, ‘আমাদের কেক দোকানের থেকে একদম আলাদা। আমরা উপকরণ মিক্স করে বেক করতে পাঠিয়ে দিই। আস্ত কাজু, ড্রাই ফ্রুট দিয়ে তৈরি হয় সে কেক।’ ফ্রুট কেক কিন্তু সারা বছর পাওয়া যায় না।
এক ব্যক্তি বললেন, ‘এখন দু’তিনটে বাড়িতে মাত্র কেক আর ওয়াইন তৈরি হয়।’ বারাকের সবাই আবার ইংরেজি বড়দিনে তৈরি করেন না। চাইনিজ নতুন বছরেও কেক তৈরি করেন অনেকে। ইতিমধ্যে কম বয়সীরা আসছে সেলফি ক্লিক করতে। অফিস ফেরতা অনেকে কেক-ওয়াইন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।