৯৩ বছর পর বর্ণবিদ্বেষী তকমা ঘুচতে চলেছে টিনটিনের
নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: অ্যার্জের টিনটিন কমিকসের বেলজিয়ামে আবির্ভাব ঘটে ১৯২৯ সালে, ‘লে পেতিত ভিনগিতিয়েম’ ক্রোড়পত্রে। প্রথম গল্প ছিল ‘সোভিয়েতে টিনটিন’। বাংলায় তার আগমন ঘটতে কেটে যায় প্রায় পঞ্চাশ বছর। তার আগে পর্যন্ত বড়ো অংশের বাঙালি পাঠকের সঙ্গে টিনটিনের যোগাযোগ ছিল বলে মনে হয় না। তোপসের জবানিতে সত্যজিৎ রায় জানিয়েছিলেন, টুনটুনির বই নয়, টিনটিনের বই। ১৯৭৫-এ ‘আনন্দমেলা’-য় প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বোম্বেটে জাহাজ’ ও ‘লাল বোম্বেটের গুপ্তধন’। ওই সময়ই সম্পাদক রূপে যুক্ত হন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। তাঁর অনুবাদে লাল চুলের খুদে সাংবাদিক মন জয় করে নিল অচিরেই।
টিনটিনের বিরুদ্ধে একাধিকবার উঠেছে ইহুদিবিদ্বেষ ও বর্ণবিদ্বেষের অভিযোগ। ‘সোভিয়েতে টিনটিন’ কমিউনিস্ট বিরোধী প্রোপাগান্ডায় ভরপুর। পরবর্তী কাহিনি ‘কঙ্গোয় টিনটিন’-এ বেলজিয়ামের উপনিবেশে টিনটিনের কাজকর্ম পরে লজ্জা দিয়েছে স্বয়ং অ্যার্জেকেও। আফ্রিকার দেশ সম্পর্কে সাম্রাজ্যবাদী মনোভাব ও শ্বেতাঙ্গ আধিপত্য ছত্রে ছত্রে ভরা এখানে।
৯৩ বছর পর অবশেষে বর্ণবিদ্বেষী তকমা ঘুচতে চলেছে খুদে সাংবাদিকের। বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ভক্ত সত্ত্বেও দুঃসাহসী টিনটিনের একটি অভিযান নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই— ‘কঙ্গোয় টিনটিন’। অ্যার্জের গোটা কাহিনিতে সে যেন কঙ্গোর কালো মানুষদের উদ্ধারকর্তা। টিনটিন ‘সায়েব’ প্রভু এবং আফ্রিকানরা দাস, বর্বর। গাড়ি থেকে ওষুধ, রণকৌশল সব দিক থেকে সে উন্নত। দিব্যি পশুদের হত্যা করছে। এমনকী, অভিযানের শেষে দেখা যায় টিনটিন তথা সাদা চামড়ার মানুষরাই কঙ্গোর বাসিন্দাদের চোখে আদর্শ ব্যক্তি। এমনকী ওদের কুকুরদের কাছেও কার্যত ভগবান কুট্টুস। গোটা বিষয়টি যে বর্ণবিদ্বেষ ছাড়া আর কিছুই নয়, দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ তুলে আসছেন কৃষ্ণাঙ্গরা।
লাগাতার প্রতিবাদের জেরে অবশেষে বিষয়টি নিয়ে টনক নড়েছে প্রকাশনা সংস্থার। তাই এবার বদলে গিয়েছে ‘কঙ্গোয় টিনটিন’-এর প্রচ্ছদ এবং কিছু দৃশ্য। কভারে এতদিনের চেনা এক কৃষ্ণাঙ্গ বালকের সঙ্গে খুদে সাংবাদিকের গাড়িতে করে যাওয়ার ছবি আর নেই। গত নভেম্বরে প্রকাশিত সংস্করণের প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে আফ্রিকার রাজা সিংহের মুখোমুখি টিনটিন এবং কুট্টুস। এখানেই শেষ নয়, কমিকস শুরুর আগে দেওয়া হয়েছে একটি প্রেক্ষাপট—কঙ্গোর ঔপনিবেশিক ইতিহাসের। কাহিনিতেও এসেছে কিছু বদল। পুরনো বইতে আফ্রিকার এক শিশুকে মানচিত্রে বেলজিয়াম কোথায়, তা দেখাচ্ছিল টিনটিন। সেই দৃশ্যে মানচিত্রের জায়গায় এসেছে অঙ্ক। প্রকাশনা সংস্থার এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বর্ণবিদ্বেষ বিরোধী সংগঠনগুলি।