কলকাতার ক্রিসমাসে ‘ডলি’-র প্রাসঙ্গিকতা

পুরনো কলকাতায় বড়দিনে বাড়িতে বাড়িতে ভোজসভা আয়োজনের রেওয়াজ ছিল। সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভোজ হত বড়লাটের বাড়িতে। কলকাতার এবং সুবে বাংলার নানান জায়গার রাজকর্মচারী ও সেনা কর্তারা এতে নিমন্ত্রিত থাকতেন।

December 25, 2024 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: পুরনো কলকাতায় বড়দিনে বাড়িতে বাড়িতে ভোজসভা আয়োজনের রেওয়াজ ছিল। সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ ভোজ হত বড়লাটের বাড়িতে। কলকাতার এবং সুবে বাংলার নানান জায়গার রাজকর্মচারী ও সেনা কর্তারা এতে নিমন্ত্রিত থাকতেন। ভারতের গভর্নর জেনারেলদের মধ্যে লর্ড কর্নওয়ালিশের জীবনযাত্রা ছিল সবচেয়ে আড়ম্বরহীন। তাঁর সাদামাটা জীবনযাত্রার জন্য তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন, কিন্তু ক্রিসমাস উপলক্ষ্যে তিনিও রাজসিক নৈশ ভোজের আয়োজন করতেন। ব্রিটিশ লাইব্রেরিতে সংরক্ষিত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির লিড কিউরেটর মিস মার্গারেট ম্যাকেপিস-এর রিপোর্টে বর্ণনা পাওয়া গিয়েছে যে, ভদ্রলোকরা রেড ওয়াইন পান করে গড়াগড়ি যেতেন। সেই রিপোর্টে আরও অনেক এমন রাজকীয় ভোজসভার বিবরণ পাওয়া যায়। এছাড়াও আরও এক সেরা নৈশ ভোজের কথা জানা যায়, যা ইতিপূর্বের সবরকম নৈশভোজের আয়োজনকে ছাপিয়ে গিয়েছিল। সেটি ছিল ১৯৩৮ সালের বাংলার গভর্নর লর্ড ব্রেবোর্ন আয়োজিত ক্রিসমাস ‘বল’ পার্টি। রাজা-মহারাজা ও ১৪০ জন মান্যগণ্য অতিথির নামে কার্ড পাঠানো হয়েছিল, রাতভর চলেছিল খানা-পিনা এবং তখনকার দিনে ৫,২৯৬ টাকা খরচ হয়েছিল! এলাহি আয়োজন যাকে বলে। তবে আজ আর এমন ভোজসভা হয়না।

সেকালের কলকাতায় আরেকটা জিনিস দেখা যেত বড়দিনে। ইংরেজরা তাকে বলত ‘ডলি’। কলকাতার সাহেবরাই বড়দিনের কলকাতায় এক নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করল। যা আর অন্য কোথাও দেখা যায় না, ডলি উপহার দেওয়ার প্রচলন হল এ শহরে। খুব সম্ভবত ডালি মানে আমরা পুজোতে ঈশ্বরের জন্যে যে অর্ঘ্য নিবেদন করি, তার থেকেই ডলি কথাটার জন্ম, এই ডলিই কেক প্রেস্ট্রিকে জনপ্রিয় করেছিল খাস কলকাতায়। ডলি হল বড়দিনের উপহার বা ভেট। এই ডলির মধ্যে থাকত কেক, পেস্ট্রি, মাছ, মাংস, ফল ইত্যাদি উপহার সামগ্রী।

ফ্যানি পার্কস-এর লেখা থেকে জানা যায় সাহেববাড়ির বেয়ারা, খানসামা ও অন্য কাজের লোকেরা বড়দিনে তাঁদের ইংরেজ মনিবদের ‘ডলি’ বা ভেট পাঠাতেন। বড়দিনে ইংরেজদের প্রতি আনুগত্য দেখাতে ‘ডলি’ পাঠাতেন ইংরেজদের সঙ্গে কাজের সূত্রে যুক্ত কেরানি, বেনিয়া, মুৎসুদ্দি ও দালালরা।

কবি ঈশ্বর গুপ্তর লেখা ‘বড়দিন’ কবিতায় ডলি-র কথা এসেছে—
“খ্রীষ্টের জনম দিন, বড়দিন নাম
বহুসুখে পরিপূর্ণ, কলিকাতা ধাম
কেরানী দেওয়ান আদি বড় বড় মেট
সাহেবের ঘরে ঘরে পাঠাতেছে ভেট
ভেটকী কমলা আদি, মিছরি বাদাম
ভালো দেখে কিনে লয়, দিয়ে ভাল দাম।”​

​​রাধাপ্রসাদ গুপ্তর লেখা থেকে জানা যায়, ‘খ্রিস্টমাস ডিনার বা সারা বছরের সবচেয়ে বড় ভোজের একটা বিশেষ চরিত্র ছিল। কলকাতাতেও এই ভোজে খাবারের মধ্যে একটা প্রধান জিনিস ছিল ‘বোর্‌স হেড’ বা শুয়োরের মাথা যা রোজমেরি, বে-লিফ (তেজপাতা), আপেল আর অন্যান্য উপকরণ দিয়ে সাজিয়েগুজিয়ে পরিবেশন করা হত। অপরিহার্য টার্কি ছাড়া ডাক রোস্ট, যত রাজ্যের জিনিস দিয়ে তৈরি বিরাট খ্রিসমাস পাই, প্লাম পুডিং, ট্যাঞ্জারিন লেবু, খেজুর, বাদাম, কিসমিস, চকোলেট ইত্যাদি।’

ভাষ্য পাঠ: মধুরিমা রায়
সম্পাদনা: মোঃ রবিউল ইসলাম

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen