মৌলবাদীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে সাহিত্যচর্চায় অবিচল থেকেছেন শামসুর রাহমান
আজ নাস্তিক কবি শামসুর রাহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলাদেশের খ্যাতনামা কবি ও বুদ্ধিজীবী শামসুর রাহমান তাঁর লেখনীর মাধ্যমে চিরকাল মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গেছেন। “আমাদের সমাজ ও লেখকের স্বাধীনতা” প্রবন্ধে তিনি মীর মশাররফ হোসেন-এর বিরুদ্ধে ফতোয়া জারির ঘটনা, উগ্রবাদীদের হাতে আবুল হুসেনের অপমানিত এবং নিগৃহীত হওয়ার ইতিহাস বর্ণনা করেছেন।। কালের পরিক্রমায় শামসুর রাহমানকেও উগ্রবাদীদের হাতে আক্রান্ত হতে হয়েছে।
১৯৯৯ সালের ১৮ জানুয়ারি “হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী” (সংক্ষেপে হুজি) দলের সদস্যরা কবিতা সংগ্রহের নামে শামসুর রাহমানের বাড়িতে যাওয়া শুরু করে। প্রথমে তারা নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী পরিচয় দেয়। সময়-সুযোগ বুঝে ঈদের আগে কবিকে হত্যা করার পূর্ব-পরিকল্পনা করে জঙ্গিরা। হামলার দিন সৌভাগ্যবশত বাসার পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সহায়তায় কবি রক্ষা পান এবং ঘটনাস্থলে দুই জঙ্গি হাতেনাতে ধরা পরে।
শামসুর রাহমানের কবিতায় অধিকাংশ সময় পূর্ব বাংলার বাঙালি জনগোষ্ঠীর চেতনা বর্ণিত হয়েছে। জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় চৈতন্য বারবার ঠাঁই পেয়েছে তাঁর লেখায়। ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুর সহপরিবার নিহত হওয়ার ঘটনা কবিকে আলোড়িত করেছিল। সামরিক জান্তার ভয়ে সবাই যখন চুপ তখন কবি লিখলেন ‘বাংলাদেশ স্বপ্ন দ্যাখে’ কবিতাটি। যা তার একটি গ্রন্থেরও শিরোনাম। কবিতাটি সমকালে প্রকাশ করা হয়। ১৯৯২ সালে পনের আগষ্ট হত্যাকাণ্ডকে সামনে রেখে কবি লেখেন ‘তোমরারই পদধ্বনি’।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা ও জনমানুষের প্রতি অপরিসীম দরদ তাঁর চেতনায় প্রবাহিত ছিল। শামসুর রাহমানের বিরুদ্ধে বারবার বিতর্ক তুলেছে কূপমণ্ডূক মৌলবাদীরা। তাঁকে হত্যার জন্য বাসায় হামলা করেছে। এতকিছুর পরও কবি তাঁর বিশ্বাসের জায়াগায় ছিলেন অনড়।
ঋণ স্বীকার: মুক্তমনা ব্লগ