দারিদ্র দূরীকরণের পরিযায়ী শ্রমিকের তথ্য ও পরিকল্পনা জরুরি: অভিজিৎ
করোনা পরিস্থিতিতে দেশের দরিদ্র মানুষের কথা না ভেবেই সরকার মাত্র ৪ ঘণ্টার নোটিসে লকডাউনের পথে হেঁটেছিল মোদী সরকার। সেই পদক্ষেপে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকেরা। স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে শুক্রবার মধ্যরাতে রকফেলার ফাউন্ডেশন এবং দ্য নাজ ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত একটি ওয়েব-আলোচনাসভায় এমনই মত প্রকাশ করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা ওঁদের কথা মাথাতেই আনিনি, কারণ ওঁদের সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণাই ছিল না।’’ ভবিষ্যতে দারিদ্র দূরীকরণের ক্ষেত্রে পরিযায়ী শ্রমিকের তথ্য জোগাড় এবং সেই মতো পরিকল্পনা কতটা জরুরি তাও বলেছেন তিনি।
বস্তুত, দেশের নানান প্রান্তে এত পরিমাণে পরিযায়ী শ্রমিক থাকেন তা হয় তো লকডাউনের আগে সাধারণ মানুষ তো দূর, সরকারি স্তরেও জানা ছিল না। লকডাউনের পরবর্তী সময়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরা নিয়ে যে দৃশ্য সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে তা বহু মানুষের কাছেই মর্মান্তিক ঠেকেছে। অভিজিৎবাবুও বলছেন, ‘‘যে ভাবে শ্রমিকেরা ট্রেনে, ট্রাকে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরেছেন তাতে আরও সংক্রমণ বেড়েছে।’’ তিনি এ-ও জানান, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য কোনও সময়েই সরকারের হাতে ছিল না, এখনও নেই। কিন্তু দারিদ্র্য দূর করতে হলে এই দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষদের বিস্তারিত তথ্য প্রয়োজন। কী ভাবে জাতীয় স্তরে পরিযায়ী শ্রমিকদের তথ্য সংগ্রহ ও ট্র্যাকিং সিস্টেম তৈরি করা যায় তারও দিশা দেখিয়েছেন বাঙালি অর্থনীতিবিদ।
লকডাউন নিয়ে বাঙালি অর্থনীতিবিদের বক্তব্য, আচমকা দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন না-করে উপযুক্ত পরিস্থিতি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করা যেত। লকডাউনের ফলে জীবিকায় যে ক্ষতি হয়েছে তা সরাসরি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়েও সুরাহা করা সম্ভব ছিল। তা না-করার ক্ষতি হয়েছে দরিদ্র পরিযায়ী শ্রমিকদের।
পরিযায়ী শ্রমিক, লকডাউনের পাশাপাশি দেশের জনগণ, অর্থনীতি সম্পর্কিত তথ্য, সমীক্ষার ব্যবস্থায় মোদী সরকার যে বদল এনেছে তার সমালোচনাও শোনা গিয়েছে অভিজিৎবাবুর বক্তব্যে। জগদীশ ভগবতী, টি.এন শ্রীনিবাসন, প্রণব বর্ধনের মতো অর্থনীতিবিদদের হাত ধরে ভারতীয় অর্থনীতির যে চর্চার ধারা তার সঙ্গে ন্যাশনাল স্য়াম্পল সার্ভে (এনএসএস), সেন্ট্রাল স্ট্যাটিসটিক্যাল অফিস, প্ল্যানিং কমিশনের মতো সরকারি সংস্থাগুলির ওতপ্রোত সম্পর্ক এবং গুরুত্বের কথাও তুলে ধরেছেন তিনি। বস্তুত, মোদী সরকার এসেই পরিকল্পনা কমিশনকে তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ তৈরি করেছিলেন এবং ধাপে ধাপে এনএসএস সমীক্ষাও বন্ধ হয়েছে। কিন্তু অভিজিৎবাবু মনে করেন, এই সংস্থাগুলির তথ্য থেকে ভারতের সার্বিক আর্থ-সামাজিক চিত্র বোঝা যেত। একই সঙ্গে সরকারি নীতির প্রতি প্রশ্ন তুললে যে বিরূপ মনোভাব সইতে হচ্ছে তারও সমালোচনা করেছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ। তাঁর মতে, দেশকে সঠিক নীতি অনুযায়ী উন্নতির পথে নিয়ে যেতে বলে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষদেরও সেই নীতি নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সামিল করা প্রয়োজন এবং সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন তোলাকেও উৎসাহিত করা উচিত।