ডানা ছাঁটলেন নাড্ডা, আলপটকা মন্তব্যের জন্য তিরস্কৃত দিলীপ
বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উভয়ের ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন নাড্ডা।

‘দয়ার রাজনীতি করে না দিলীপ ঘোষ’—বঙ্গ বিজেপির কোন্দল নিয়ে এটাই সাফ কথা রাজ্য সভাপতির। তবে ‘কার’ দয়া, সেই বিষয়টি স্পষ্ট না করলেও ঠারেঠোরে দিলীপবাবু বুঝিয়ে দিয়েছেন, দলের পথ ও মতের কাছেই তিনি দায়বদ্ধ। আর সেই দায়বদ্ধতা পালনে তাঁকে যে কোন্দল মিটিয়ে আপসের রাস্তায় হাঁটতে হবে, সেই বার্তা স্পষ্ট করে দিল কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। রবিবার দিল্লিতে দিলীপবাবুকে তলব করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা। বাংলার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উভয়ের ঘণ্টাখানেক বৈঠক হয়। সূত্রের খবর, বৈঠকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব মিটিয়ে সকলকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন নাড্ডা। জানিয়ে দিয়েছেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলের অন্দরে কোনও বিরোধ কাম্য নয়। সেই সঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যে বঙ্গ-বিজেপির পাশে থাকবে, সেই বিষয়েও আশ্বস্ত করেছেন নাড্ডা।
কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গেলে একুশের গোড়াতে বিধানসভা ভোট হবে বাংলায়। এখন থেকেই সেই ভোটকে এখন পাখির চোখ করে এগতে চাইছে মোদি-শাহ-নাড্ডার দল। কিন্তু হালে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে বেশকিছু ঝামেলার ঘটনায় বেশ অস্বস্তিতে পড়তে হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে। বঙ্গ-বিজেপির একটা অংশ দিলীপবাবুর কাজকর্ম নিয়ে দিল্লিতে সরব হয়েছিলেন বলে রাজনৈতিক মহলের খবর। তবে এদিন, নাড্ডার সঙ্গে বৈঠকে বসার আগে দিলীপবাবু বলেন, ‘আমি কারও স্বার্থে আঘাত করিনি। লোকসভা ভোটে বাংলায় রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব আমিই সামলেছি। আমাকে পরবর্তী সময়ের জন্যও ফের রাজ্য সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সেটা তো এমনি এমনি দেওয়া হয়নি। কে কী অভিযোগ করছেন, আমি জানি না। কিন্তু যদি কেউ আমার বিরুদ্ধেই অভিযোগ করেন, তাহলে তিনি বা তাঁরা একবার তৃণমূলের সঙ্গে লড়ে দেখান। যাঁরা এসব বলছেন, হয় তাঁরা কাজ করতে পারছেন না, বা কাজ করতেই চাইছেন না। কাজের যোগ্য হলে পার্টিতে সুযোগ নিশ্চয়ই মিলবে।
রাজ্য কমিটি এখনও সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। ফলে যাঁরা অভিযোগ করছেন, তাঁদের এখনও ভেবে দেখার সময় রয়েছে। তবে ভোটে লড়ার জন্য টিকিটের বিষয়টি আমি সুনিশ্চিত করতে পারব না।’গত ২৪ কিংবা ২৫ জুলাই দিলীপবাবু সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় নাড্ডা দলীয় কর্মসূচিতে দক্ষিণ ভারতে ছিলেন। চলতি সপ্তাহে দিলীপবাবুকে ১৫ আগস্ট দিল্লিতে আসতে বলা হয়। এ নিয়েও রাজনৈতিক মহলে জল্পনা চড়ছিল। প্রশ্ন উঠছিল, দিলীপবাবুকে চাপে রাখতেই কী কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁকে তলব করল? তিনি অবশ্য বলেছেন, নাড্ডাজির সঙ্গে আমার এই বৈঠক নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন আগেই আমি দলের সর্বভারতীয় সভাপতির সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছিলাম। তিনি রবিবার রাতে সেই সময় দিয়েছেন। তবে কে কী বলল, আমার জানার প্রয়োজন নেই। দিলীপ ঘোষ সবসময়ই সামনের সারিতে থেকে রাজনীতি করে। দয়ার রাজনীতির কোনও প্রয়োজন নেই আমার।’
এরই পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেও নাড্ডার কাছে গুচ্ছের নালিশ ঠুকেছেন দিলীপবাবু। বৈঠকে তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যের পুলিস-প্রশাসন কার্যত রাজ্য সরকারের ইনফর্মারের মতো কাজ করছে। বাংলার বিজেপি নেতা, কর্মীদের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে। ট্যাপ করা হচ্ছে ফোনও। মিলছে না আরটিআইয়ের জবাব। রাজ্যে রাজনৈতিক সন্ত্রাস চলছে বলেও নাড্ডাকে অভিযোগ করেছেন তিনি। দিলীপবাবু বলেছেন, ‘আমি নিজে বহু আরটিআই করেছি। কিন্তু কোনও আরটিআইয়ের ঠিকমতো জবাবই পাইনি।’ দিল্লিতে বিজেপিতে যোগ দিলেন শাহিনবাগ আন্দোলনের কয়েকজন।