পুজো স্পেশাল বিভাগে ফিরে যান

এখানেই আছে বাঙালির শিব! জানুন ভদ্রেশ্বরের প্রাচীন অন্নপূর্ণা মন্দিরের ইতিহাস

January 30, 2024 | 2 min read

নিউজ ডেস্ক,দৃষ্টিভঙ্গি: হুগলীর ভদ্রেশ্বর শহরের আকর্ষণীয় তীর্থপীঠ গুলির অন্যতম তেলেনিপাড়ার অন্নপূর্ণা মন্দির। মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন স্থানীয় জমিদার শ্রী বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। ইংরেজি ১৮০১ সাল, বাংলা ১২০৮ সনের ফাল্গুনী পূর্ণিমায় মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। জানা যায়, প্রাথমিক জীবনে বৈদ্যনাথবাবু মানকুন্ডু শহরে বাস করতেন। কর্ম থেকে বিরতি নেবার পর তিনি তেলিনিপাড়া অঞ্চলে স্থায়ী বাসস্থান গড়ে তোলেন। বৈদ্যনাথ বাবু বারানসির অন্নপূর্ণা মায়ের একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই তেলেনিপাড়ায় অন্নপূর্ণা মন্দিরটি তিনি নির্মাণ করেন।

কথিত আছে, জমিদার শ্রী বৈদ্যনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মা অন্নপূর্ণা কাশীবাসী হতে চেয়েছিলেন। সেখানে অন্নপূর্ণার চরণে আশ্রয় নিয়ে বাকি জীবন শিবধামে কাটানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন তিনি। জমিদার ছেলে মাকে ছাড়তে রাজি হয়নি। তারপর তাঁর মায়ের ইচ্ছে পূরণ করার উদ্দেশ্যে দেবী অন্নপূর্ণাকে মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন। কাশীর মতো আবহ আনতে মন্দিরের পাশে থাকা পুকুরের সঙ্গে গঙ্গাকে যোগ করেছিলেন তিনি।

পুরাণ মতে, শিবের উপরে রাগ করে দেবী পার্বতী কাশীতে গমন করেন। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন পৃথিবীর যাবতীয় অন্ন।তার ফলে পৃঠিবীতে শুরু হয়েছিল খাদ্যের আকাল। পরিস্থিতি সামাল দিতে কাশীতে গিয়ে শিব, পার্বতীর কাছে অন্ন ভিক্ষা করেন। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন দেবীর মন্দির। তারপর থেকেই ভিক্ষারত শিব সহ অন্নদাতা অন্নদার প্রতিমার পুজো প্রচলিত হয়।

মন্দিরের শিব ও অন্নপূর্না মূর্তিটি অন্নদামঙ্গলের শিবের আদলে, অষ্টধাতু নির্মিত। দেবীর হাতে অন্নপাত্র ও হাতা লক্ষ্য করা যায়। দুই ধাপের মন্দিরের গড়নে নবরত্নের আদল অর্থাৎ ৯টি চূড়া আছে। যদিও ভদ্রেশ্বরেশিবের ভঙ্গিমা ভিক্ষার নয়। শিবের দেহের গঠনে হালকা ভুঁড়ির আভাস, মজবুত গোঁফ, হাতে গাঁজার কলকে। যা বাঙালির শিব তথা অন্নদামঙ্গলের শিবের স্মৃতি উস্কে দেয়।

মন্দিরে সারাবছর নিত্যপুজো ছাড়াও বছরের কয়েকটি পার্বণ এখানে ধুমধাম করে পালিত হয়। এর মধ্যে অন্নপূর্ণা পুজো, অক্ষয় তৃতীয়া এবং দুর্গাপুজো অন্যতম। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন বিগ্রহকে মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বাইরে চাতালে আনা হয়। বিকেলে বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির নিজস্ব রথে করে শিব-অন্নপূর্ণাকে স্থানীয় অঞ্চলে পরিভ্রমণ করানো হয়। দোলায় করে বাড়ির ছেলেরা লক্ষ্মী-নারায়ণের সওয়ারীও করান। চৈত্রমাসের শেষদিনেও অন্নপূর্ণা পুজোর দিন মন্দির প্রাঙ্গণ ফুল ও আলোকসজ্জায় সুশোভিত হয়ে ওঠে। শিব-অন্নপূর্ণার পুজো দর্শন ও আশীর্বাদ গ্রহণের উদ্দেশ্যে অসংখ্য ভক্তগণের ঢল নামে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#West Bengal, #hooghly, #Bhadreswar, #Annapurna Temple

আরো দেখুন