কফির সাথে মেতে উঠুন দেবব্রত বিশ্বাসের গানে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: ১৭৪ ই, রাসবিহারি অ্যাভিনিউ — ট্রায়াঙ্গুলার পার্কের খুব কাছেই রয়েছে বাড়িটি। সামনের দিকে রয়েছে ব্র্যান্ডেড বিপণীর এক বিশাল শোরুম। পাশ দিয়েই একটি গলিপথ চলে গিয়েছে বাড়ির পিছন দিকে। গলি পথের মাথায় একটি গ্লো সাইন-এ লেখা ‘মাড ক্যাফে’।
শুধু খাওয়া নয়, মাড ক্যাফের মাহাত্ম্য রয়েছে অন্য জায়গায়। এবং তা জানার পরে, কোনও বাঙালীই আর নিজেকে আটকাতে পারবেন না এ জায়গায় আসা থেকে। প্রসিদ্ধ রবীন্দ্রশিল্পী মনোজ মুরলী নায়ারের কথায়, ‘‘এ জায়গা আমাদের কাছে শক্তিপীঠ’’।
কারণ, এই ১৭৪ই, রাসবিহারি অ্যাভিনিউ-এর বাড়িটিতেই এক সময়ে ভাড়া থাকতেন দেবব্রত বিশ্বাস। যাঁকে ‘জর্জ বিশ্বাস’ বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন আপামর বাঙালী।
তাঁর বলিষ্ঠ কন্ঠে রবীন্দ্রগীত এক অন্য রূপ নিয়েছিল। পৌঁছে দিয়েছিল তা জনসাধারণের কাছে। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রচলিত চলনের বাইরে গিয়ে তা গাওয়া এবং তাতে পাশ্চাত্য বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, মেনে নিতে পারেননি তৎকালীন রক্ষণশীল শিল্পীরা। সংঘাত ও প্রতিসংঘাতে শিল্পী বন্ধ করে দেন গান গাওয়া। এবং তাঁর সেই হতাশা স্থান করে নেয় ‘ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত’ আত্মজীবনীতে। ১৯৭৯ সালে প্রকাশিত হয় শিল্পীর সেই বই। আর তার এক বছর পরেই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান অভিমানী শিল্পী।
চার দশকের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু, জর্জ বিশ্বাসের ‘ক্রেজ’ এখনও একই রয়েছে। এবং সেটাই যেন প্রমাণ করল মাড ক্যাফে। ক্যাফে করার জন্যই বাড়িটি কিনেছিলেন অর্ণব মিত্র। ২০০৮ সালে। কিন্তু, ঘুণাক্ষরেও জানতেন না এই বাড়ির ইতিহাস। পরিষ্কার করতে গিয়ে এক গোছা ইলেকট্রিক বিল খুঁজে পান, যাতে লেখা ছিল দেবব্রত বিশ্বাসের নাম। তাঁর বাবা জর্জ বিশ্বাসের ভক্ত। সেই থেকেই ক্যাফে তৈরির ভাবনা। এমন একটি ক্যাফে যেখানে সারাক্ষণ বাজবে জর্জ বিশ্বাসের গান।
প্রবেশপথ থেকে শুরু করে ক্যাফের অন্দরসজ্জা— চারপাশেই রয়েছে দেবব্রত বিশ্বাসের ছবি। রয়েছে প্রচুর বই। দেবব্রত বিশ্বাস নাকি খেতে ভালবাসতেন, রান্নাও করতেন খুব ভাল। ওনাকে উৎসর্গিত এই ক্যাফেতে তাই রয়েছে বাঙালীর প্রিয় মাছের নানা মুখরোচক আইটেমও। সঙ্গে নানা ধরনের স্যান্ডউইচ। রয়েছে গরম ও ঠান্ডা পানীয়।