লীলা মজুমদার: এক ছক-ভাঙা জীবন
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রায় পরিবারের প্রতি বাংলা ভাষার শিশু সাহিত্য চিরকৃতজ্ঞ, লীলা মজুমদার সে ঐতিহ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। ‘পদিপিসির বর্মিবাক্স’, ‘টংলিং’, ‘হলদে পাখির পালক’, ‘গুপীর গুপ্তখাতা’ আজও মনে রেখেছে বাঙালি, এ প্রজন্মের বঙ্গ সন্তানেরাও তা পড়ছেন। শিলং থেকে কলকাতায় ফেরার পর সুকুমার রায় তাঁকে দিয়ে জীবনের প্রথম গল্প ‘লক্ষ্মীছেলে’ লিখিয়েছিলেন, সন্দেশে তা ছাপা হয়। তখন লীলা মজুমদারের বয়স ১২ বছর।
লীলা রায় থেকে তিনি লীলা মজুমদার হলেন কীভাবে?
খ্যাতনামা দন্ত চিকিৎসক সুধীন কুমার মজুমদারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। কিন্তু এ বিয়ে ছিল কার্যত অসাধ্য সাধন। ব্রাহ্ম আর হিন্দুর বিয়ে কেউই মেনে নিতে চাননি। ১৯৩২ সালে তাঁর বিয়ে হয়। নিজের সিদ্ধান্তেই এ বিবাহ করেছিলেন লীলা। ব্রাহ্ম-হিন্দুর বিয়েকে কেন্দ্র করে ঝড় উঠেছিল রায় পরিবারে। পারিবারিক মেলামেশা থেকে প্রেম গড়ায়, বেঁকে বসেন গোঁড়া ব্রাক্ষ্ম প্রমদারঞ্জন। রবীন্দ্রনাথ নিজে হাজির থেকে বিয়ে দিয়েছিলেন। বিয়ে হয় সই করে। রায় পদবি উঠে গিয়ে নামের শেষে যোগ হল মজুমদার। বাবার ব্রাহ্ম প্রমদারঞ্জনের সঙ্গে চিরকালের জন্য বিচ্ছেদ ঘটে গেল। মা ও ভাইবোনদের সঙ্গে লীলার সম্পর্ক আজীবন ছিল। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে লীলা বাবার ধাত পেয়েছিলেন। আপস করেননি। নিজের বাবার সঙ্গেও না।
লীলা লিখে গিয়েছেন, ‘বাবা আমাকে ত্যাগ করলেন। পরদিন সকালে সব কথা ভুলে দুজনে গেলাম বাবাকে প্রণাম করতে। তিনি আমাদের দেখেই ঘর থেকে উঠে চলে গেলেন। শুধু ঘর থেকেই নয়, আমার জীবন থেকেই সরে পড়লেন। তারপর আঠারো বছর বেঁচে ছিলেন, কখনো আমার বা আমার ছেলে-মেয়ের দিকে ফিরে চাননি।… আঠারো বছর পরে যখন তিনি চোখ বুজলেন, আমি এতটুকু ব্যক্তিগত অভাব বোধ করিনি। যে অভাব, যে বেদনা ছিল, ঐ সময়ের মধ্যে তার মৃত্যু হয়েছে টের পেলাম।’
তথ্যঋণ: লীলাবতী: শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়