বাড়ছে কন্টেইনমেন্ট জোন, কড়া পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের
প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা। প্রতিদিন বদলে যাচ্ছে এলাকাভিত্তিক সংক্রমণের ঘনত্ব। আর এটাই এই মুহূর্তে মাথাব্যথার অন্যতম কারণ রাজ্য প্রশাসনের। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন কলকাতা ও তার আশপাশের জেলাগুলি নিয়ে। নজর করার মতো বিষয় হল, মহানগর এবং দুই ২৪ পরগনায় সংক্রমণের অভিঘাত অনেকটাই সামলে নিয়েছে সরকার। কিন্তু আক্রান্তের সংখ্যার নিরিখে চরিত্র সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে দূরের বেশ কিছু জেলায়। আর এর প্রধান কারণ অবশ্যই ভিন রাজ্য থেকে আসা-যাওয়ার বিধিনিষেধের বেড়াজাল ভেঙে যাওয়া।
মাত্র ১০ দিনের মধ্যে নদীয়া, পূর্ব বর্ধমান, উত্তর দিনাজপুর, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, কোচবিহার এবং পুরুলিয়ায় সংক্রামক এলাকার সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। করোনা মোকাবিলায় এই জেলাগুলিতে সরকারি তৎপরতা এখন তুঙ্গে। তাই কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, ঝাড়গ্রামের মতো জেলাগুলিতে এর বিপরীত ছবি দেখা গেলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছে না নবান্ন। গত ২০ দিন ধরেই এই চার-পাঁচটি জেলায় কোভিড রোগীর সংখ্যাটা একটি নির্দিষ্ট জায়গাতেই ঘোরাফেরা করছে। ফলে কমেছে কন্টেইনমেন্ট জোন। কিন্তু উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় পরিস্থিতি একেবারেই আলাদা। বৃহস্পতিবার নবান্নের পক্ষ থেকে প্রকাশিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে, এখন রাজ্যে মোট কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা ২ হাজার ৩৫৮টি। মাত্র একদিনে সংক্রামক এলাকা বেড়েছে ৫৪টি। বেড়েছে উদ্বেগও।
জেলাশাসকদের দপ্তর সূত্রে জানা যাচ্ছে, জুন মাসের শেষ থেকেই জেলায় জেলায় সক্রিয় করোনা রোগীদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গিয়েছিল। এর মাঝে উল্লেখযোগ্যভাবে করোনা পরীক্ষা বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। ফলে উপসর্গহীন বা রোগের মাঝারি কিছু লক্ষণ থাকা ব্যক্তিরাও আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হচ্ছেন। যার প্রভাব পড়ছে সংখ্যায়। কিন্তু বড়সড় ধাক্কা লেগেছে আনলক-২ পর্বে যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা শিথিল হওয়ায়। সরকারি সূত্রে খবর, গত ১০ জুলাই থেকেই ফের বাড়তে শুরু করে আক্রান্তের সংখ্যা। ফলে কন্টেইনমেন্ট জোনের তালিকাও লম্বা হতে থাকে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু ট্রেনে চেপে নয়, গাড়িতেও জেলায় জেলায় ফিরছেন অনেকেই। সংক্রমণের আশঙ্কায় দেশের ৬টি শহরের সঙ্গে বিমান যোগাযোগ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু পার্শ্ববর্তী রাজ্যের বিমানবন্দরে নেমে সড়কপথে এরাজ্যে ঢোকার প্রবণতা রোখা যায়নি। কারণ, কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী সড়কপথে যাতায়াতে কোনও বিধিনিষেধ নেই। অনেকেই পাশের রাজ্যের বিমানবন্দরে নেমে গাড়িতে চেপে চলে আসছেন বাংলায়।
এতকিছুর পরও কলকাতার ছবিটা তুলনামূলকভাবে ভালো। কিছুদিন আগে শহরে কন্টেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা ছিল ২৯টি। তা কমতে কমতে প্রথমে ২৩ এবং এখন ২০তে এসে দাঁড়িয়েছে। নদীয়ায় মাত্র ১০ দিনে নতুন করে ৯৫টি এলাকা সিল করা হয়েছে। পূর্ব বর্ধমান ও মুর্শিদাবাদে একই সময়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে সংক্রামক এলাকার সংখ্যা। তবে সবথেকে ভয়াবহ অবস্থা কোচবিহারের। এক সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে সেখানে কন্টেইনমেন্ট জোন বেড়েছে ২০০-রও বেশি।