বাংলা নাট্য আন্দোলনের কিংবদন্তি শম্ভু মিত্র
বাংলা নাট্য জগতের এক কিংবদন্তি শিল্পী শম্ভু মিত্র। অভিনয়ের পাশাপাশি নাটক রচনা, পরিচালনা, নির্দেশনা এবং সংগঠন গড়ে তোলায় তাঁর অবদান বাংলা নবনাট্য আন্দোলনের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে। নাট্যজগতে আধুনিকতার প্রাণপুরুষ ছিলেন তিনি।
স্কুল জীবন থেকেই নাটকের প্রতি আকর্ষণ ছিল শম্ভু মিত্রের। প্রচুর বাংলা নাটক পড়েছেনও। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ছাত্র ছিলেন যখন, নিয়মিত যাতায়াত ছিল পাড়ার থিয়েটারে। নাট্যচর্চার সূচনা ১৯৩৯ সালে, কলকাতার রংমহল থিয়েটারে অভিনয়ের মাধ্যমে। পরবর্তী সময়ে মিনার্ভা এবং এরপর নাট্যনিকেতনের সাথে যুক্ত হন।
নাট্যনিকেতন দলটি নাম পাল্টে শ্রীরঙ্গম হয়েছিল। শ্রীরঙ্গমে শম্ভু মিত্রের সাথে পরিচয় হয় বিখ্যাত নাট্যকার শিশিরকুমার ভাদুড়ীর। ততদিনে শম্ভু মিত্রের জীবনের অংশ হয়ে গেছে নাটক। আর জীবন দর্শনের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়েছে শিল্প দর্শন। সেই তাগিদে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত হন ফ্যাসিবাদবিরোধী শিল্পী সংঘ গণনাট্য সংঘের সাথে।
একাধারে তিনি অভিনয় করেছেন, নাটক রচনা করেছেন, নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বাংলা নাটককে আধুনিক শিল্পযাত্রাপথে এগিয়ে যেতে রেখেছেন বিশেষ ভূমিকা। বিখ্যাত নাট্যদল ‘বহুরূপী’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন শম্ভু মিত্র। তাঁর রচিত নিরীক্ষাধর্মী বহু নাটক পেয়েছে আধুনিক শিল্পের বিস্ময়কর অভিব্যক্তি। বিশেষ করে ‘বহুরূপী’র নাট্য পরিক্রমা ভারতীয় নাট্য চর্চাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উপস্থাপন করায় বিশেষ অবদান রেখেছে।
শম্ভু মিত্রের মৌলিক নাটকের মধ্যে ‘উলুখাগড়া’, ‘বিভাব’, ‘ঘূর্ণি’, ‘চাঁদ বণিকের পালা’, ‘অতুলনীয় সংবাদ’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। নাট্যরূপ দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের ‘চার অধ্যায়’, ইওজিনের নাটক অবলম্বনে ‘ওনিল-এর স্বপ্ন’, ইবসেনের ‘পুতুলখেলা’, সফোক্লিসের ‘রাজা অয়দিপাউস’ সহ বহু নাটক। অভিনয় করেছেন ‘রক্তকরবী’, ‘রাজা’, ‘চোপ আদালত চলছে’ – এমনি আরো অনেক নাটকে। স্ত্রী তৃপ্তি মিত্র ও কন্যা শাওলি মিত্র নাট্যজগতে স্বনামে খ্যাতিমান।