রাজ্য বিভাগে ফিরে যান

অশান্ত রবীন্দ্র নিকেতন, মুক্ত চিন্তাকে প্রাচীরে ঘেরার চেষ্টা বিজেপির?

August 24, 2020 | 2 min read

ভাঙো, বাঁধ ভেঙে দাও। জীর্ণ, পুরাতন যা কিছু, তা বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু। ভয়শূন্য চিত্তে জ্ঞানকে মুক্ত করে ভারতকে জাগরিত করার আহ্বান করেছিলেন তিনি। সেই কবিগুরুর শান্তির নীড়ে আজ অশনি সঙ্কেত। রাজনীতির কালো মেঘ জমেছে ঈশান কোণে।  বিশ্বভারতী থেকে কবির মুক্তচিন্তার ঐতিহ্যকেই মুছে ফেলার কুনাটিকা রচিত হচ্ছে।

ঘটনার সূত্রপাত ১৭ই আগস্ট ২০২০। বিশ্বভারতী চত্বরে পৌষ মেলার প্রাঙ্গণে একটি প্রাচীর তৈরির ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে শান্তিনিকেতন। কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নির্মীয়মান প্রাচীর ভেঙে ফেলে একদল বহিরাগত। এই দলকে নাকি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শাসক দলের বিধায়ক নরেশ বাউড়ি। প্রতিবাদী পক্ষের দাবি, মুক্তচিন্তার যে স্বপ্ন রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন, তা ধূলিস্যাৎ করতেই এই প্রাচীর তৈরি। রবীন্দ্র ঐতিহ্যের পরিপন্থী এই প্রাচীর বিশ্বভারতীর লজ্জা।

এ বিষয়ে দুবরাজপুরের বিধায়ক নরেশ বাউড়ি বলেন, “এখানে রাজনীতির কিছুই নেই। আমি বিশ্বভারতীর প্রাক্তনী হিসেবে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া, শিক্ষকরা কেউই কোন সীমানা প্রাচীর চান না । তাই সবাই এর প্রতিবাদ করেছেন। এটা খুবই স্বতঃস্ফূর্ত একটি প্রতিবাদ।”

এই ঘটনার পর বিশ্বভারতী বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই বিষয়ে মুখমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন, “আমি এসপিকে অনুরোধ করেছি যাতে তিনি ডিএম এবং বাকি সদস্যদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সমস্যার সমাধান করেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যাতে কোন নির্মাণেই বিঘ্নিত না হয়, সেটা দেখতে হবে। এমন কিছু করা উচিৎ হবে না, যা বাংলার সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যকে নষ্ট করে।” 

*সমস্যার সূত্রপাত*

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী স্থাপন করেছিলেন। প্রথাগত পড়াশোনা তাঁর জেলের মতো মনে হতো, তাই সবাই যাতে প্রকৃতির মাঝে, খোলা আকাশের নীচে পড়াশোনা করতে পারে, সেজন্যেই বানিয়েছিলেন এই বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বভারতী বাংলার একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। আচার্য স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদী।

বিবাদ বাঁধে পৌষ মেলা প্রাঙ্গনে প্রাচীর নির্মাণের তৎপরতা নিয়ে। প্রাচীর নির্মাণের বিরূদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরেই প্রতিবাদ চলছিল। আন্দোলনকারীরা আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে চেয়েছিলেন। তাই উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সাথে সাক্ষাতের অনুমতিও চান, কিন্তু তা মেলেনি।

*বিদ্যুৎ চক্রবর্তী ও বিতর্ক*

বারবার বিতর্কে জড়ানোই অভ্যাসে পরিণত করে ফেলেছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। সাম্প্রতিককালে CAA বিরোধী আন্দোলনের আঁচ পড়েছিল বিশ্বভারতীতেও। ছাত্র সংগঠন থাকলেও আপাত শান্ত এই প্রতিষ্ঠানে দুই বাম ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এবিভিপির বিরুদ্ধে। অভিযোগ, আক্রমণকারীরা উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ। এমনকী উপাচার্য তাদের বাইক বাহিনী এনে শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বলেও অভিযোগ উঠেছিল। উপাসনায় হিন্দিতে গান গাইয়েও বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১২৫ বছরের প্রথা ভেঙে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পৌষমেলা এবছর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু, এই সিদ্ধান্তের কারণ কোভিড পরিস্থিতি না। উপাচার্য নিজে জানিয়েছেন এতো বড় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে অপারগ বিশ্ববিদ্যালয়। এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সদস্যদের সাথে কোন আলোচনাও করা হয়নি। এর আগে বন্ধ করা হয়েছিল এবছরের বসন্ত উৎসবও। একের পর এক এরকম সিদ্ধান্তকে কর্তৃপক্ষের স্বৈরাচারীতা হিসেবেই দেখছেন পড়ুয়া এবং এলাকাবাসীরা। সীমান্ত প্রাচীর তারই অন্যতম প্রমাণ।

*বিদ্বজ্জনদের প্রতিবাদ*

বিশ্ব কবির আশ্রম রাজনীতির কাদামাখা কুস্তির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। বিশ্বভারতীতে পাঁচিল কাণ্ডে এমনটাই মত বিদ্বজ্জনদের।  বুদ্ধিজীবীরা খোলা আবেদনে অনুযোগ করেছেন, বহুদিনের ঐতিহ্য-বাহিত স্মৃতি, শান্তিনিকেতনের সুষমা ও বিশ্বভারতীর শিক্ষা … সবই সমূলে নষ্ট হতে বসেছে। এই দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন সকলেই।

পথ দেখাবেন কবিই

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘অচলায়তন’ নাটকে দেওয়াল ভাঙার কথাই লিখেছিলেন। যে দেওয়ালের জন্য গুরু প্রবেশ করতে পারেন না, সেই দেওয়াল ভেঙেই ফেলা উচিত। আজ রবীন্দ্রনাথের ঐতিহ্য সঙ্কটের মুখে। তাই কোমর বাঁধছেন রবীন্দ্র-অনুরাগীরা। অচলায়তনের বাঁধ ভাঙতেই হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Visva Bharati, #SHANTINIKETAN, #Rabindra niketan

আরো দেখুন