দেশ বিভাগে ফিরে যান

বিনামূল্যে সরকারি হাসপাতালে কোভাক্সিন! প্রস্তুতি শুরু কেন্দ্রের

August 24, 2020 | 2 min read

হিউম্যান ট্রায়ালের চূড়ান্ত পর্যায় এখনও গবেষণাগারে। তা সত্ত্বেও উৎপাদনে ছাড়পত্র দিয়ে দিল কেন্দ্রীয় সরকার। অর্থাৎ, অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাজারে আনার প্রস্তুতি শুরু করতে আর কোনও বাধা রইল না সিরাম ইনস্টিটিউটের। দেশীয় না হোক, বিদেশি ফর্মুলায় তৈরি ‘কোভাক্সিন’ই তাই এখন ভরসা ভারতের। যেহেতু ব্রাজিলে ‘ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে’ এই টিকা একরকম উত্তীর্ণ, তাই একধাপ এগিয়েই গেল নরেন্দ্র মোদি সরকার। খানিকটা ঝুঁকি নিয়েই। শুধু তাই নয়, সরকারি হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিতে যাতে এই ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেওয়া যায়, তার প্রস্তুতি এবং খরচের হিসেব-নিকেশও শুরু হয়ে গেল জোরকদমে। এমনটাই স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর।

তবে কেন্দ্রের এহেন নজিরবিহীন পদক্ষেপকে ‘রাশিয়া মডেল’ বলে উল্লেখ করেছেন সমালোচকরা। অর্থাৎ ভারতে ‘কোভিশিল্ড’-এর ফেজ টু ও থ্রি ট্রায়ালের পাশাপাশি চলবে উৎপাদনও। আইসিএমআর অবশ্য জানিয়েছে, বিষয়টি ঠিক অনুকরণ নয়। সময় বাঁচাতে এটি ‘ক্যালকুলেটেড রিস্ক’। যদিও ভ্যাকসিন নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা ও সমীক্ষা বিশ্লেষণ করেই উৎপাদন-অনুমোদনের পথে এগনো হয়েছে বলে দাবি আইসিএমআরের।

কোভিডকে রুখতে ভ্যাকসিন ছাড়া আর কোনও গতি নেই। তাই যত দ্রুত সম্ভব বাজারে ভ্যাকসিন আনাই এখন একমাত্র লক্ষ্য মোদি সরকারের। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সুরাহা দেওয়ার বিষয়টিকেও অগ্রাধিকার দিচ্ছে কেন্দ্র। সে ক্ষেত্রে সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কিংবা হাসপাতালে বিনামূল্যে মিলতে পারে ভ্যাকসিন। করোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে ঠিক কত পরিমাণ ডোজ লাগবে, খরচই বা কত পড়বে, তার হিসেবে-নিকেশ শুরু করেছে স্বাস্থ্যমন্ত্রক। আলোচনা চলছে রাজ্যগুলির সঙ্গে। প্রস্তুতকারক সংস্থার সঙ্গেও কথা বলছে কেন্দ্র। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের অবস্থান খুব স্পষ্ট—কোনও রাজ্যকে আলাদা করে ভ্যাকসিন কিনতে হবে না। কিনবে কেন্দ্রই। তারপর রাজ্যগুলির চাহিদা মতো সরবরাহ করা হবে।

ভারতে ভ্যাকসিন আবিষ্কার ও উৎপাদন সংক্রান্ত খুঁটিনাটি বিষয়ে নজর রাখছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানী তথা আইসিএমআরের ‘এপিডেমিওলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজিজেস’ বিভাগের প্রধান ডাঃ সমীরণ পাণ্ডা। রবিবার তিনি বলেন, ‘অক্সফোর্ডের তৈরি ভ্যাকসিনের ফেজ থ্রির ট্রায়াল চলছে ব্রাজিলে। তাতে ইতিবাচক ফল মিলছে। অর্থাৎ এই ভ্যাকসিনটির এখনও পর্যন্ত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। তারই ভিত্তিতে ব্রিজিং স্টাডিজের মাধ্যমে আমরাও এগনোর চেষ্টা করছি।’

এগনো বলতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় জোর দেওয়া। এদিন সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন ডাঃ পাণ্ডা। তাঁর কথায়, ‘ভ্যাকসিনটির ফেজ টু ও থ্রি ট্রায়ালের সঙ্গেই শুরু হচ্ছে উৎপাদন। আগামী তিন চার মাসের মধ্যে ট্রায়ালের ফলাফল হাতে চলে আসবে। তখন আর উৎপাদনের জন্য আমাদের যেন অপেক্ষা করতে না হয়। ট্রায়াল সফল হবে, নাকি ব্যর্থ— সেটা অবশ্যই চিন্তার বিষয়। তা হলেও এই ‘ক্যালকুলেটেড রিস্ক’ নিতেই হচ্ছে।’

ভারতে এখন তিনটি ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এর মধ্যে দু’টি সম্পূর্ণ দেশীয়। আইসিএমআর এবং ভারত বায়োটেকের ‘কোভ্যাকসিন’। ক্যাডিলা কোম্পানির ‘জাইকোভ-ডি’। দু’টির ফেজ টু ট্রায়াল চলছে। ‘কোভিশিল্ডে’র ফেজ টু এবং থ্রি’র একসঙ্গে ট্রায়াল শুরু করছে সিরাম। সেই সঙ্গে উৎপাদনও। সংস্থার পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভ্যাকসিন মজুত করা প্রয়োজন। সেই কারণেই উৎপাদনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। তবে যাবতীয় ট্রায়াল প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ ও সফল হলে বাজারজাত হবে ভ্যাকসিন। তার আগে একদম নয়। এদিকে, ভ্যাকসিন বাজারে এলেও সবাই তা নিতে পারবে না। আইসিএমআর জানিয়েছে, কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার প্রয়োজন নেই। কারণ তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে গিয়েছে। যাঁরা আক্রান্ত হননি, তাদেরও ভ্যাকসিন দেওয়ার আগে পরীক্ষা করা হবে। মূলত দেখা হবে, উপসর্গ না থাকলেও শরীরে ‘সার্স কোভ-টু’ প্রবেশ করেছিল কি না। তবে যাঁরা এখনও আক্রান্ত হননি, তাঁরা একমাত্র ভ্যাকসিন নিতে পারবেন।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#hospital, #Covaxin, #central government

আরো দেখুন