১০০ দিনের কাজে নজির! রাজ্যের সেরা হুগলি
১০০-তে ১২৮। করোনা পরিস্থিতিতেও মাত্র সাড়ে তিন মাসে বাজেট বরাদ্দের থেকে ২৮ শতাংশ বেশি টাকার কাজ। নজির গড়ে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে শীর্ষ স্থান দখল করেছে হুগলি জেলা। করোনা নিয়ে ডামাডোলের মধ্যেই শ্রমদিবস তৈরি থেকে বাড়ি প্রতি কাজ দেওয়া, খরচের অঙ্ক—প্রায় সমস্ত মানদণ্ডেই উত্তীর্ণ হয়েছে সাফল্যের সঙ্গে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সময়কালে শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে ১ কোটি ৭৯ লক্ষ ৮৩ হাজারেরও বেশি। চলতি অর্থবর্ষে আগস্টের মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত কাজের পরিসংখ্যানের বিচারে তাই এক নম্বরে গঙ্গাপাড়ের এই জেলা। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা, তৃতীয় পশ্চিম মেদিনীপুর এবং চতুর্থ বাঁকুড়া। এই চারটি জেলাই বাজেটে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে বেশি কাজ করতে পেরেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। বাকি ১৯টি জেলাতেও কাজ চলেছে জোরকদমে। পরিসংখ্যান বলছে, সব মিলিয়ে এই করোনা আবহে রাজ্যে ১৮ কোটি ১৬ লক্ষ ২৫ হাজার ৬০৫ শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে। এই প্রকল্পে বাজেট লক্ষ্যমাত্রার ৫০ শতাংশের নীচে কাজ হয়েছে মাত্র তিনটি জেলায়—দার্জিলিং গোর্খা হিল কাউন্সিল, কালিম্পং এবং পুরুলিয়া। আর এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে গরিব মানুষের হাতে কাজ দিতে কতটা বদ্ধপরিকর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত হুগলির জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও। তিনি বলেন, ‘আমরা একটি টিম হিসেবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি। পরিসংখ্যানে যা দেখা যাচ্ছে না, তা হল—আমরা প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিককে কাজ দিতে পেরেছি। ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের এই সাফল্য ধরে রাখতে এখন থেকেই চেষ্টা শুরু করেছি আমরা। বছরের শেষ পর্বে গিয়েও এক নম্বরে থাকতে চাই।
গত এপ্রিল মাস থেকে ১০০ দিনের কাজে সাফল্য আনতে ময়দানে নেমেছিলেন কর্তারা। লকডাউন পর্বে সাময়িক সমস্যা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু দ্রুত তা কাটিয়ে উঠে কাজ শুরু হয় জোরকদমে। গত ২০ আগস্ট দেখা যায়, পরিসংখ্যানে সব জেলাকে ছাপিয়ে গিয়েছে হুগলি। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজের দিক থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরেই কঠিন যুদ্ধ চলছিল হুগলির। গ্রাম পঞ্চায়েতের সংখ্যা অনুযায়ী কত শ্রমদিবস তৈরি হয়েছে, কত বাড়ি কাজ পেয়েছে, কত টাকা খরচ হয়েছে—এমন একাধিক বিষয়ের উপরে নম্বর দেওয়া হয়। সেই নিরিখে দুই জেলার মধ্যে সমানে সমানে টক্কর চলছিল। শেষ পর্যন্ত বাজিমাত করে হুগলি। জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের কাজের জন্য দেওয়া অর্থবরাদ্দের ১০০ শতাংশ তো বটেই, তারপরেও ২৮.৫৫ শতাংশ বেশি টাকা খরচ করেছে এই জেলা। এখানেই তফাৎ হয়ে যায়। ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস ফেলা দক্ষিণ ২৪ পরগনা খরচ করেছে মোট বরাদ্দের ১০১.৪৮ শতাংশ টাকা। এদিক থেকে এগিয়ে রয়েছে বাঁকুড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর। তারা যথাক্রমে বাজেটের ১২০.৯৪ এবং ১০৫.৫৫ শতাংশ টাকা খরচ করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যের মোট ৩ হাজার ৩৪৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত ইতিমধ্যেই ৫ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা খরচ করে দিয়েছে। অর্থাৎ লকডাউনের মধ্যেও জোরদার কাজ হয়েছে রাজ্যজুড়ে। তবে তালিকায় সার্বিক কাজের নিরিখে পিছিয়ে আছে কালিম্পং জেলা। রাজ্য প্রশাসনের অবশ্য দাবি, আরও অনেকটা সময় বাকি আছে। ফলে জেলাগুলি নিজেদের অবস্থান উন্নত করতে পারবে।