করোনা থেকে বাঁচার উপায়
এখন ভারতে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা ভাইরাস আতঙ্ক। আতঙ্কের কারণ থাকলেও কিছু পদ্ধতি অবলম্বন করলে সহজেই বেঁচে থাকা যায় এই ভাইরসের প্রকোপ থেকে। তবে তার আগে জানতে হবে এই ভাইরাসের বিষয়ে। সেক্ষেত্রে কিভাবে বাঁচা যায় বুঝতে আরও সুবিধে হবে। তবে আগেই বলে নেওয়া ভালো চীনা পণ্য বা চীন থেকে আসা চিঠির সঙ্গে সংক্রমণের কোনও সংস্রব নেই।
এখনও পর্যন্ত সাত রকমের করোনা ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। এর মধ্যে বহুল পরিচিত সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা সার্স করোনা এবং মিডল ইস্ট রেসপিরেটরি সিনড্রোম বা মার্স করোনা। এখন চীনে যে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়াচ্ছে, সেটি হল নোভেল করোনা ভাইরাস। এই ভাইরাস সম্পর্কে আগে কোনও তথ্য জানা ছিল না।
চীনের উহানে এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পরেই নোভেল করোনার অস্তিত্ব জানা যায়। করোনা একটি ল্যাটিন শব্দ। এর অর্থ হল উজ্জ্বল মুকুটসদৃশ। পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় যেমন উজ্জ্বল করোনা দেখা যায়, এই ভাইরাসের চরিত্রও তেমনই উজ্জ্বল।
কিভাবে বোঝা যাবে আপনি আক্রান্ত?
সাধারণ ফ্লু বা সর্দিতে যেমন হয়, করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও তেমন দেখা যায়। যেমন জ্বর, কফ, সর্দি, শ্বাস কষ্ট প্রভৃতি। সংক্রমণ গুরুতর হলে নিউমোনিয়া বা শ্বাস কষ্টের প্রকোপ বেশী হতে দেখা যাবে। এই সব ক্ষেত্রে কিডনি ঠিকভাবে কাজ করবে না। ফলে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
প্রাথমিকভাবে উপসর্গের নিরিখে অন্য ফ্লুয়ের সঙ্গে এর প্রভেদ করাটা খুবই কঠিন। তাই চিকিৎসদের পরামর্শ হল, জ্বর, সর্দি হলেই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিন। পরীক্ষা করিয়ে দেখুন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) তাদের গাইডলাইনে বলেছে, যাঁরা জ্বর, সর্দি ও শ্বাসের সমস্যায় ভুগছেন, তাঁরা অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
কতদিনে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বোঝা যায়?
কেউ যদি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তবে দুই থেকে ১১ দিনের মধ্যে তাঁর শরীরে এর উপসর্গ দেখা যাবে। তবে সাম্প্রতিক নোভেল করোনার ক্ষেত্রে এই উপসর্গ ১৪ দিনেও দেখা যাচ্ছে।
আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কাদের বেশী?
একটু বেশী বয়সের মানুষ ও যাঁদের ডায়াবেটিস বা হার্টের অসুখ রয়েছে, এমন ব্যক্তিদের নোভেল করোনা আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশী। তবে এর মানে এটা নয় যে কমবয়সীদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। হু বলছে, প্রত্যেকেরই সতর্ক থাকা উচিত।
কিভাবে ছড়ায় এই ভাইরাস?
নোভেল সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত কিছু জানা যায়নি। বহু প্রাণীতেই করোনা ভাইরাস থাকতে পারে। কিন্তু মানুষের মধ্যে এর থেকে সংক্রমণের ঘটনা জানা যায়নি। চীনের প্রাণীজ বাজার থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তবে এর মানে এই নয় যে বাড়ির পোষ্য কুকুর-বিড়ালকে এখন থেকেই সন্দেহের চোখে দেখতে হবে। তাদের থেকে নোভেল ছড়ানোর কোনও আশঙ্কা নেই। শুধু বাজারে গেলে কোনও প্রাণী বা প্রাণীটিকে যেখানে রাখা হয়েছে, সেই স্থানটি খালি হাতে না ধরলেই হল।
নোভেল ভাইরাস ছড়ায় মানুষ থেকে মানুষে। অর্থাৎ কোনও আক্রান্ত ব্যক্তির ধারে কাছে থাকলে রোগ ছড়াতে পারে। তাঁদের থুথু-কফ থেকেও এই ভাইরাস ছড়ায়। তাই সামান্য কিছু ‘কমন প্র্যাকটিস’ দরকার, যেমন সর্দি-কাশিতে একটি হাতেই মুখ ঢাকা অথবা টিস্যু পেপার ব্যবহার করা। তারপর যথাস্থানে টিস্যু পেপারটি ফেলে দেওয়া। কারণ নোভেল ভাইরাস খালি স্থানে কতক্ষণ বাঁচতে পারে, সে সম্পর্কে এখনও বিস্তারিত জানা না গেলেও, প্রাথমিক অনুমান, ঘণ্টাখানেকের বেশী সেটি বাঁচতে পারে না। তাই একটু সতর্কতা প্রয়োজন।
আর হাত সবসময় জল, সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেললে এই ভাইরাসের হাত থেকে বাঁচা যায়। আক্রান্তের থেকে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখা উচিত। চোখ, নাক বা মুখ স্পর্শ করা উচিত নয়। মনে রাখা উচিত, শুধু মাস্ক পড়লেই কিন্তু রোগ হওয়া আটকানো যাবে না।
ওষুধ কি?
এখনও পর্যন্ত নেই। অ্যান্টিবায়োটিক ভাইরাসে কার্যকরী হয় না। যদি ভাবেন নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন নেওয়া আছে, আপনি সুরক্ষিত, সেটা কিন্তু ভুল ধারণা। শুধু পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা আর ভালো খাদ্যাভ্যাস যেমন ধূমপান না করা, অযথা অ্যান্টিবায়োটিক বা ভিটামিন-সি ওষুধ না খাওয়া— এই ভাইরাসের আক্রমণ থেকে আপনাকে ঠেকাতে পারবে।