সব্জির চড়া দাম, নাকাল মধ্যবিত্ত
প্রতিদিন বাড়ছে সব্জির দাম। বাজারে গিয়ে দামদস্তুর করতেই রীতিমতো চক্ষু চড়কগাছ মধ্যবিত্তদের। একইসঙ্গে চোখ রাঙাচ্ছে আলু। দামের নিরিখে শহরের সমস্ত বাজারে পেঁয়াজকে রীতিমতো টেক্কা দিয়েছে আলু। খুচরো বাজার তো বটেই পাইকারি বাজারেরও একই হাল। সেখানেও আলুর দাম চড়া। ব্যবসায়ীদের আশঙ্কা, আগামী দিনে আলুর দাম আরও বাড়তে চলেছে। কিছু অসাধু চক্রের জেরেই বাজারে আলু পর্যাপ্ত পরিমাণে আসছে না বলেও অভিযোগ করেছেন বহু ব্যবসায়ী। চাহিদা এবং জোগানের মধ্যে ফারাক তৈরি করতে চেষ্টা করছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। তার জেরেই বাজারে আলুর দামের এই বাড়বাড়ন্ত। অনতিবিলম্বে অসাধু চক্রগুলিকে নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে, পুজোর সময় আলুর দাম প্রতি কিলো প্রায় ৫০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে বলেও আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট সবার। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অবিলম্বে আরও সক্রিয় হোক সরকারি টাস্ক ফোর্স, এমনটাই দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বুধবার শহরের বিভিন্ন ছোট-বড় বাজারগুলিতে ঘুরে দেখা গেল, সব্জি কিনতে রীতিমতো নাভিশ্বাস ফেলতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের। লকডাউনের জেরে প্রত্যেকের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি প্রায় তলানিতে। তার মধ্যে কাঁচা সব্জির অগ্নিমূল্য কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে তাঁদের। এদিন সকালে গড়িয়াহাট বাজারে জ্যোতি আলুর প্রতি কেজিতে দাম ছিল ৩২ টাকা এবং চন্দ্রমুখীর মূল্য ৩৬ টাকা প্রতি কেজি। অর্থাৎ গত কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আলুর দাম বেড়েছে প্রায় সাত-আট টাকা (প্রতি কেজি)। গড়িয়াহাটের আলু ব্যবসায়ী নিশিকান্ত ঘরামি জানিয়েছেন, বুধবার জ্যোতি আলু কিনতে পাইকারি দাম পড়েছে ১,৪৫০ টাকা (প্রতি বস্তা বা ৫০ কিলো)। প্রতি কিলোতে হিসেব করলে এদিনের জ্যোতি আলুর পাইকারি দাম ছিল ২৯ টাকা। যা স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই বেশি। ব্যবসায়ীর মতে, পাইকারি বাজারে আলু মজুত করে রাখা হচ্ছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কৃত্রিম চাহিদা সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করছে। হিমঘরে যথেষ্ট পরিমাণ আলু মজুত থাকলেও, তা বাজারে আসছে না বলেই দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা।
উল্লেখযোগ্যভাবে শিয়ালদহের কোলে মার্কেট এবং পোস্তা বাজারে দামের ঠেলায় চিন্তায় পড়েছেন খুচরো ব্যবসায়ী থেকে ক্রেতা, প্রত্যেকেই। কোলে মার্কেটে এদিন জ্যোতি আলুর দাম ছিল প্রতি কেজিতে ২৯ টাকা। সেখানে চন্দ্রমুখী ৩৪ টাকা কিলো। পোস্তা বাজারে জ্যোতি আলুর দাম ঘোরাফেরা করেছে ৩০-৩১ টাকার মধ্যে। সমস্ত বাজারেই আলুর দামের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জোগান এবং চাহিদার মধ্যে যে বিরাট পার্থক্য তৈরি হয়েছে, সে কথা স্পষ্ট। পশ্চিমবঙ্গ ফোরাম অব ট্রেডার্স অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ কোলে বলেন, বছরে মোট ৬৫ লক্ষ মেট্রিক টন আলুর চাহিদা থাকে। সেখানে এবছর উৎপাদন হয়েছে এক কোটি মেট্রিক টনের কাছাকাছি। সুতরাং, আলুর জোগানে কোনও সমস্যা থাকার কথাই নয়। তাহলে সমস্যা কোথায়? এখানেই উঁকি দিচ্ছে ব্যবসায়ী মহলে অসাধু চক্রের সম্ভাবনা।
অন্যদিকে, আলু ছাড়াও অন্যান্য সব্জির দাম অনেকটাই বেড়েছে। লেক মার্কেট চত্বর ঘুরে দেখা গিয়েছে, বেগুন ৮০ টাকা, ঝিঙে ৪০ টাকা, পটল এবং টম্যাটো ৮০ টাকা প্রতি কিলো দরে বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপির দাম অত্যন্ত চড়া। মাঝারি মাপের প্রতি পিস ফুলকপিতে বিক্রেতারা চাইছেন ৫০-৬০ টাকা। যার ফলে সব্জি বাজারে দাম করতেই ভ্রু কোঁচকাচ্ছেন ক্রেতারা।