‘সন্দেশখালির মা-বোনেদের সম্মান কী ভাবে নষ্ট করেছেন, লজ্জা করে না?’ মোদীকে প্রশ্ন মমতার
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: রবিবার জোড়া সভা করেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বারাকপুরের তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিকের সমর্থনে আমডাঙার সাধনপুর উলুডাঙা তুলসিরাম উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে জনসভা করেন মমতা। উল্লেখ্য, এদিনই বারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংয়ের সমর্থনে সভা করেছেন মোদী। মমতা কার্যত পাল্টা জবাব দিলেন বারাকপুরের সভা থেকে।
ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ নয়, রামনবমী পালন, সিএএ কার্যকর-সহ পাঁচ গ্যারান্টির কথা বলেছেন মোদী (Modi)। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা খোঁচা, “হিংসুটে, কুচুটে।” সিএএ নিয়ে মমতা বললেন, “মোদী নাকি ব্যারাকপুর থেকে কিছু গ্যারান্টি দিয়েছেন শুনলাম। বলেছেন, ক্যা মতুয়াদের করতেই হবে। গায়ের জোরে হবে না। আপনার লজ্জা করে না, আপনি মতুয়াদের অধিকার কাড়তে এসেছেন? মতুয়া ভাই-বোনদের গায়ে হাত দিলে আমার গায়ে হাত দেওয়া হবে। ওঁরা ইতিমধ্যে নাগরিক। আপনি ওঁদের ভোটে জিতেছেন। অমি চিরকাল লড়াই করেছি। আমার উপর গর্জন করলে, আমি বর্ষণ করি। তড়পালে পাল্টা দিই। ভাল মুখে বললে গাছতলা ঝাঁট দেওয়া থেকে রান্নাও করে দিতে পারি। কিন্তু কেউ যদি বলে দেখে নেব, চাহলে আমার থেকে বেশি দেখে নিতে আর কেউ পারবে না। কারণ এটাই আমাদের বাংলার মাটির শিক্ষা। আমরা মাথা নীচু করে চলি না। আমাদের চমকে ধমকে লাভ নেই।”
মমতা কার্যত মোদীর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, “কুৎসা করে, অপপ্রচার করছে। আজকে মোদী দেশ, জাতি, ধর্ম, মায়ের সম্মান বিক্রি করে দিয়েছে। ১০০ দিনের টাকা লুট করেছে। বাংলার বাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন। একটা ছেলে মেয়েকেও চাকরি দেননি। মানুষখেকো বাঘ শুনেছেন, চাকরিখেকো বাঘ শুনেছেন? বিজেপি (BJP) হচ্ছে চাকরিখেকো বাঘ। তিন বছর কাজ করিয়ে টাকা দিলেন না। তখন আপনার টাকা ছিল না পকেটে? আর এখন বিজ্ঞাপন দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চোর বলতে হচ্ছে আপনাকে। আপনি যত ইচ্ছে বলে যান, আমার গায়ে ফোস্কা পড়বে না।”
মমতার কথায় বিজেপির কুৎসার একটাই অর্থ বিজেপি ভয় পেয়েছ। মোদী সরকারের বঞ্চনার অভিযোগ এনে মমতা বলেন, “টাকা খরচ করে আমার বিরুদ্ধে এসব বলতে হচ্ছে। ১০০ দিনের কাজ, আবাস, সড়ক, ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্পে বাংলা পাঁচ বার এক নম্বর হয়েছে। গত ১২ বছরে বাংলায় যা কাজ হয়েছে, আর কোথাও হয়নি। আজ আপনি চোর বলছেন। তাহলে আপনার দেওয়া সার্টিফিকেটগুলি দেখাই! লজ্জা করে না! হিংসুটে, কুচুটে। কুৎসা, অপপ্রচার, মিথ্যে বলে প্রচার চলছে। ইউটিউব, টিভি, কাগজ খুলুন, সব জায়গায় বাবুর জয়গান। মনে হচ্ছে দেশে আর কেউ নেই। এটা কখন হয় জানেন, মাৎস্যন্যায় অবস্থা হলে। যখন অন্য় কোনও দলের কিছু বলার থাকে না, দেশ জেলখানায় পরিণত হয়। মোদী দেশ, জাতি, ধর্ম, মায়েদের সম্মান বিক্রি করে দিয়েছেন। বকেয়া টাকা লুঠ করেছেন, নোটবন্দি করে টাকা লুটেছে, ছেলেমেয়েদের চাকরি দেয়নি।”
মমতা (Mamata Banerjee) বলেন, “বাংলায় ৪৩ লক্ষ বাড়ি আমরা করেছি। নাম দেয় শুধু ওনার, কিন্তু সেখানে তো আমাদেরও শেয়ার রয়েছে। এবার বলছে ওখানে নাকি দুর্নীতি হয়েছে। বাড়িগুলো তৈরি করে কে? পঞ্চায়েত। তোমাদের তো পঞ্চায়েত রয়েছে, সিপিএমের তো পঞ্চায়েত রয়েছে। পঞ্চায়েত শুধু কি তৃণমূলের একার রয়েছে? এখনও পর্যন্ত দুর্নীতি প্রমাণ করতে পারোনি। মিথ্যে কথা বলে বেরাচ্ছে। তিন দফার নির্বাচন হয়েছে। প্রথমটায় এপাশ, পরেরটায় ওপাশ, আর তার পরেরটা ধপাস।’’
সন্দেশখালি মমতা বলেন, “এখনও সন্দেশখালি নিয়ে মিথ্যে কথা বলে যাচ্ছেন। সন্দেশ তো আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। সন্দেশ হচ্ছে, দেশের খবর কী? মোদী হারছেন, মোদী বিদায় নিচ্ছেন।” মোদীকে মমতার প্রশ্ন সন্দেশখালির মা-বোনেদের সম্মান কী ভাবে নষ্ট করেছেন, লজ্জা করে না?
রাজ্যপালের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি রাজভবনে লাটুসাহেব। মেয়েরা যেতে পারছে না ভয়ে। আমি সংবিধান সঙ্কটে পড়ে গিয়েছি। কারণ আমার প্রযোজন থাকলে রাস্তায় কথা বলতে হবে। কিন্তু রাজভবনে ঢুকতে পারছি না। এই রাজ্যপালের যে সব কীর্তি-কেলেঙ্কারি প্রকাশ পাচ্ছে, সেই কারণে। কী প্রধানমন্ত্রী, আপনার উচিত ছিল না তাঁকে পদত্যাগ করিয়ে সরিয়ে নেওয়ার।”