শিবরাম চক্রবর্তী – রস এবং স্যাটায়ার যার লেখার পরতে পরতে
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: অন্যকে নিয়ে মজা করা যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন নিজেকে নিয়ে মজা করা। কারণ, নিজেকে নিয়ে মজা করলে আর কারও রসিকতা করার সুযোগ থাকে না! এটা ভালোই জানতেন শিবরাম। একজন বুদ্ধিমান মানুষ নিজেকে নিয়ে মজা করার সুযোগ অন্যের হাতে তুলে দেবেন, এটা তো হতেই পারে না। তাই এই মহান ক্ষমতাটা আজীবন নিজের কাছেই কুক্ষিগত রেখেছিলেন তিনি।
অবলীলায় সারা জীবন নিজেকে নিয়ে মজা করেছেন শিবরাম চক্রবর্তী। এ জন্যই তিনি বাংলা সাহিত্যের একদম অন্য রকম একজন স্যাটায়ার লেখক। শিবরাম চক্রবর্তীর সঙ্গে তুলনা হয় শুধু শিব্রাম চকরবরতির। রম্য গল্পে তাঁর একটা নিজস্ব জগৎ আছে, যেখানে তিনি একাই রাজা।
তিনটি বিষয়ে তাঁর নেশা ছিল প্রচণ্ড। ভোজন তথা খাওয়াদাওয়া, নিদ্রা তথা যাকে বলে একেবারে ঘুমিয়ে দিনরাত এক করে ফেলা আর সিনেমা। খুব রোগা আর লিকলিকে ছিলেন ছোটবেলায়। জেলের খাদ্য খেয়ে নাকি তাঁর স্বাস্থ্যোন্নতি হয়! ঘণ্টায় ঘণ্টায় খিদে পায় তাঁর, সময়মতো না খেলেই কাহিল হয়ে পড়েন। খাওয়ামাত্রই ঘুম, ঘুম থেকে উঠে খাওয়া। বেলা অবধি ঘুমানো। ঘুমাতে ঘুমাতে ক্লান্ত হয়ে আরেকটু গড়িয়ে নেওয়া—এই তো শিবরাম!
শিবরামকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আপনি লেখেন কখন?
শিবরাম অনাগ্রহের সঙ্গে বললেন, সকালে ঘুম থেকে উঠি। তা, ঘুম তো একটা বড় পরিশ্রমসাধ্য কাজ। তাই প্রচণ্ড ক্লান্ত লাগে, তাই আবার খানিকটা ঘুমাই।
তারপর শেষমেশ ওঠেন কখন? ওই বেলা ১১টা বেজে যায়
উঠে?
উঠে বাথরুম–টাথরুম সারি। চা পান করি, কাগজটা উল্টেপাল্টে দেখি, স্নান করি। এই করতে করতে দুপুর, দুপুরে খাওয়ার পর তো ঘুমাতেই হয়। ঘুমাই।
তারপর?
উঠতে উঠতে বিকেল গড়িয়ে যায়। আবার একটু চা পান করি। আবার একটু বেরোই। আর বেরোলে তো রাবড়ির দোকানে যেতেই হবে। কারণ, রাবড়িই তো পৃথিবীর চরমাশ্চর্য, দিনে একবার রাবড়ি না খেলে কি চলে? রাবড়ি-টাবড়ি খেয়ে আবার ফিরে আসি। একটু বই-টই দেখি। খাই। আর খাওয়া শেষ করে ঘুমিয়ে পড়ি।
তাহলে লেখেন কখন?
কেন পরের দিন!
এই হচ্ছেন শিবরাম। সে জন্যই বোধ হয় ‘শিবরাম বনাম শিব্রাম’, এটাও তাঁর একটা বইয়ের নাম হয়ে ওঠে।
তাঁকে শুধু স্যাটায়ার লেখক বললে একটু কমই বলা হবে। কারণ, বাংলা সাহিত্যের সত্যিকারের সার্কাজম চর্চা যদি কোনো লেখক করে থাকেন, সেটা তিনিই। শিবরামের লেখার আরেকটা অসাধারণ বৈশিষ্ট হলো শব্দ নিয়ে, বাক্য নিয়ে খেলা। যেন শব্দ নিয়ে জাগলিং করছেন একজন দক্ষ জাগলার। পড়তে গেলে অজান্তেই মুগ্ধ হতে হয়।