নিজেদের ঘরেও পরাজিত সৃজন, দীপ্সিতা!
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: লোকসভা ভোটে বাংলায় দাগই কাটতে পারল না কংগ্রেস, সিপিএম। কংগ্রেস তাও মালদহ দক্ষিণের আসন ধরে রাখতে পেরেছে। ডালুবাবুর ছেলে ঈশা খান চৌধুরী মান রেখেছেন। তবু গত ভোটের ২ থেকে নেমে এবার মাত্র ১টিই ভরসা। কিন্তু সিপিএম যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই। বাংলার ৪২টি আসনের মধ্যে ২৩টি আসনে প্রার্থী দেয় সিপিএম। বামফ্রন্টের শরিক দলগুলি প্রার্থী দিয়েছিল ৭টি আসনে। ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, বাংলায় সিপিএমের ২৩ জন প্রার্থীর মধ্যে ২১ জনের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
নিজের ওয়ার্ডেই হেরেছেন লালপার্টির ‘তারকা’ প্রার্থী যাদবপুরের সৃজন ভট্টাচার্য। শুধু হেরেছেন বললে ভুল হবে। হোম-ওয়ার্ড ১০৬ নম্বরেই সৃজন তৃতীয় হয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই, যে নতুন মুখ নিয়ে সিপিএমের এত ঢক্কানিনাদ, নেট মাধ্যমে ‘হাল ফেরানোর’ আস্ফালন, তিনি নিজের ওয়ার্ডেই পরাজিত। উল্টে সেখানে দ্বিতীয় হয়েছে বিজেপি। প্রায় ১১০০ ভোটে ‘লিড’ পেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্যদিকে, নিজের পাড়াতেই জয়ের মুখ দেখতে পারেননি সিপিএমের আরেক তাজা মুখ শ্রীরামপুরের প্রার্থী দীপ্সিতা ধরও। হারতে হয়েছে তৃণমূলের কাছে। শুধু তাই নয়, শ্রীরামপুর লোকসভায় অন্তর্গত ডোমজুড় বিধানসভায় তাঁর হোম-গ্রাউন্ডেও ‘থার্ড’ তিনি। রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, প্রচারের ঢক্কানিনাদে হেভিওয়েট হয়ে উঠলেও, বাস্তবে ‘প্রভাবহীন’ বামেদের নবপ্রজন্ম।
প্রথমে সৃজনের কথায় আসা যাক। বাইপাস সংলগ্ন কায়স্থপাড়া, পূর্বাচল, রামলাল বাজার সহ তৎসংলগ্ন এলাকা নিয়ে সৃজনের নিজের ১০৬ নম্বর ওয়ার্ড। মাঝে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন ছাড়া সেই ২০০০ সাল থেকেই এই ওয়ার্ড ডানপন্থী দলের দখলে। এই ওয়ার্ডেরই হালতুর কায়স্থপাড়ার বাসিন্দা সিপিএমের তথাকথিত ‘যৌবনের দূত’ সৃজন। গোটা যাদবপুর জুড়ে জোরকদমে প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি। ‘র্যা প সং’ থেকে ‘এআই’ নির্ভর প্রচার, কোনও কিছুই বাদ দেয়নি। কিন্তু এত কিছুর পরেও যাদবপুর লোকসভা আসনে তৃতীয় বামেরা। ‘নক্ষত্র’ প্রার্থী সৃজন নিজের ওয়ার্ডেই হেরেছেন। এই ওয়ার্ডে তৃণমূল পেয়েছে ১০ হাজার ১৯৩ ভোট। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি পেয়েছে ৯১০১ ভোট। তৃতীয় স্থানে ৬৮৪৪ ভোট টেনেছেন বামেদের এই যুবনেতা।
অন্যদিকে, গগনচুম্বী আশা জাগিয়েও ব্যর্থদের তালিকায় স্থান হয়েছে দীপ্সিতা ধরের। প্রচারপর্বে তাঁর জনগণের সঙ্গে ‘দহরম-মহরম’ শেষপর্যন্ত ভোটবাক্সে হাওয়া! এসএফআইয়ের এই সর্বভারতীয় নেত্রীর জামানত জব্দ হয়েছে। লোকসভার দৌড়ে তৃতীয় স্থানে থামতে হয়েছে দীপ্সিতাকে। খোদ নিজের পড়াতেই হেরেছেন। অর্থাৎ, ডোমজুড় বিধানসভার বালি নিশ্চিন্দার ১৮৯ নম্বর বুথেই তৃণমূলের কাছে হারতে হয়েছে তাঁকে। ওই বুথে তৃণমূলের সংগ্রহ ৩৫৭ ভোট, সিপিএম ২৯৪ এবং বিজেপি ১৯৯। শুধু তাই নয়, ডোমজুর বিধানসভার বাসিন্দা হয়েও সেখানে দ্বিতীয় স্থান পাননি বাম প্রার্থী। ডোমজুড় থেকে যেখানে তৃণমূলের সংগ্রহ ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৩৮২ ভোট, সেখানে দ্বিতীয় বিজেপি পেয়েছে ৭০ হাজার ৬৯ ভোট এবং সিপিএমের দীপ্সিতা পেয়েছেন মাত্র ৩৬ হাজার ৭৬৮ ভোট। রাজনীতির কারবারিদের ব্যাখ্যা, প্রচারের ঢক্কানিনাদে হেভিওয়েট হয়ে উঠলেও, বাস্তবে ‘প্রভাবহীন’ বামেদের নবপ্রজন্ম।