রাজ্যসভায় সঙ্ঘের স্তুতি উপ-রাষ্ট্রপতির মুখে, সরব INDIA, কী বলছে দেশের ইতিহাস?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: বুধবার, রাজ্যসভার অধিবেশনে অধ্যক্ষ তথা দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের মুখে শোনা গেল আরএসএসের স্তুতি। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের অপ্রতিরোধ্য গ্রহণযোগ্যতার কথা দাবি করে, এক বিতর্কে তিনি বলেন, “দেশের উন্নয়ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে আরএসএসের।” দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “নিঃস্বার্থভাবে জাতিকে সেবা করার জন্য গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সংগঠন হল আরএসএস।”
নিট ও ইউজিসি-নেট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে উত্তাল দেশ। কিন্তু আজও এনটিএ-র চেয়ারম্যান প্রদীপকুমার জোশী নিজের পদে বহাল। তিনি সঙ্ঘ ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। যা নিয়ে সংসদে সরব হয়েছে বিরোধীরা। সমাজবাদী পার্টির সাংসদ রামজীলাল সুমনের এক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে আরএসএস নিয়ে মন্তব্য করেন ধনখড়।
দেশের ইতিহাস কী বলছে সঙ্ঘ সম্পর্কে?
কেশব বলিরাম হেডগেওয়ার প্রতিষ্ঠিত আরএসএস-কে তিন বার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। প্রথম বার ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি মহাত্মা গান্ধী হত্যার পর, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল লিখছেন, “দেশে ঘৃণা ও হিংসা ছড়ানোর শিকড় হয়ে উঠেছে আরএসএস।”
সে’বছর ১৮ জুলাই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে লেখা চিঠিতে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল জানাচ্ছেন, “গান্ধী হত্যার ষড়যন্ত্রে যে হিন্দু মহাসভা লিপ্ত, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। সরকার ও রাষ্ট্রের জন্য আরএসএস বিপদজনক।” গোলওয়ালকারকে লেখা একটি চিঠিতে সর্দার প্যাটেল লেখেন, “সঙ্ঘ বক্তব্য, ভাষণ সব কিছুই সাম্প্রদায়িক বিষে পরিপূর্ণ।”
সঙ্ঘ কতটা দেশপ্রেমী?
কেশব বলিরাম হেডগেওয়ারের নেতৃত্বে থাকা আরএসএস গান্ধীর ডান্ডি অভিযানে অংশ নেয়নি। এমনকি ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময়তেও সঙ্ঘ কার্যত নিষ্ক্রিয় ছিল। বোম্বে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় সঙ্ঘ স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে বিরত ছিল।
দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলিতে সঙ্ঘের অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। রাজ্যপাল, কেন্দ্রের মন্ত্রী থেকে আরম্ভ করে বিজেপি শাসিত বারোটি রাজ্যের মধ্যে আটজন মুখ্যমন্ত্রী সকলেই সঙ্ঘের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে যুক্ত। বিভিন্ন সংস্থা, যেমন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ, সেন্ট্রাল বোর্ড অফ ফিল্ম সার্টিফিকেশন, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া, এমন অজস্র সংস্থার মাথায় বসছেন সঙ্ঘে পরিচালক, প্রচারকেরা। এমনকি দেশের সৈনিক স্কুলগুলো চালানোর বরাত অবধি দেওয়া হচ্ছে সঙ্ঘের ঘনিষ্ঠদের।
এই পরিস্থিতিতে সংসদে বসে সঙ্ঘকে দরাজ শংসাপত্র দিচ্ছেন ধনখড়, যার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন এবং কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ।