২৭ সেতু ‘বিপজ্জনক’, ভেঙে গড়ার পরামর্শ রাজ্য সরকারের
কলকাতা বাদে রাজ্যের ২৭টি সেতু ‘বিপজ্জনক’। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি সেতু নদীর উপর রয়েছে। দ্রুত সেগুলি ভেঙে গড়ার পক্ষেই মত বিশেষজ্ঞদের। এখনই সেটা সম্ভব না হলে অবিলম্বে মেরামত করতে হবে। নতুবা যানবাহন চলাচলে ঝুঁকি থাকছেই। এমনিতেই কোভিড, লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজস্বে টান। জিএসটি’র ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে না কেন্দ্র। এর মাঝেই রাজ্যের উদ্বেগ বাড়িয়ে দিল সেতু-সমীক্ষার রিপোর্ট। আর্থিক সঙ্কটের জেরে এই মুহূর্তে সেতুগুলির পুনর্নির্মাণের রাস্তায় হাঁটছে না সরকার। এমনটাই সূত্রের খবর। বরং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে আপাতত ‘নিরাপদ’ করে তোলার পরিকল্পনা নিতে পারে পূর্ত দপ্তর। এর জন্য সোমবার থেকে সমীক্ষার রিপোর্টকে সামনে রেখে পর্যালোচনা শুরু করেছেন পূর্ত সচিব নবীন প্রকাশ। দপ্তরের প্রতিটি জোনের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকও করবেন তিনি। এদিকে, মঙ্গলবার ৬৪টি পুরসভার সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের। মূলত, পরিচ্ছন্ন পুরসভা গঠন এবং রাস্তার পাশে ইমারতি সামগ্রী সরানোর বিষয়টি ছিল বৈঠকের মূল লক্ষ্য। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে এদিন সেই বৈঠক বাতিল করা হয়েছে বলে পুরমন্ত্রী জানিয়েছেন।
মাঝেরহাট ব্রিজ-বিপর্যয়ের পরই রাজ্যের প্রতিটি সেতু, উড়ালপুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পরিকল্পনা নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপধ্যায়। নিয়োগ করা হয় দেশের নামজাদা চারটি সমীক্ষক সংস্থাকে। কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকার সেতুগুলিও পরীক্ষা করা হয়। কলকাতার টালা, মাঝেরহাট, সুকান্ত ও বেলগাছিয়া সেতু ছাড়া বাকি ব্রিজগুলি কেএমডিএ’র অধীনে। ইতিমধ্যে ১৬টি সেতুর সমীক্ষার কাজ শেষ করে রাজ্যকে রিপোর্ট দিয়েছে ব্রিজ বিশেষজ্ঞ কমিটি। কলকাতা বাদে রাজ্যে যত সংখ্যক সেতু বা উড়ালপুল রয়েছে, সেগুলির সিংহভাগই পূর্ত দপ্তরের। এ ছাড়াও কিছু সেতুর দেখভাল করে মৎস্য ও সেচ দপ্তর। নবান্ন সূত্রে খবর, বিভিন্ন জেলা মিলিয়ে পূর্ত দপ্তরের অধীন ৩৭২টি সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে সম্প্রতি। এর মধ্যে ৩৬৭টি সেতুর রিপোর্ট পৃথক পৃথক ভাবে সরকারের ঘরে জমা দিয়েছে সমীক্ষক সংস্থাগুলি। তাতে বলা হয়েছে, ২২৩টি ব্রিজের ছোটখাটো মেরামতের প্রয়োজন। যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে ২৭টি ব্রিজ ‘বিপজ্জনক’। সেগুলি ভেঙে গড়ে তোলার পক্ষে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ঠিক যেভাব ব্রিজ বিশেষজ্ঞ ভি কে রায়নার পরামর্শে টালা ব্রিজ গড়ে তোলা হচ্ছে।
পূর্ত দপ্তর সূত্রে ‘বিপজ্জনক’ ব্রিজগুলির মধ্যে বীরভূম, মুর্শিদাবাদের বেশ কয়েকটি ব্রিজ রয়েছে। এ ছাড়া উত্তরবঙ্গের কয়েকটি ব্রিজও রয়েছে তালিকায়। দপ্তরের এক আধিকারিক সোমবার জানিয়েছেন, যে ব্রিজগুলি ‘বিপজ্জনক’ বলে রিপোর্টে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি বহু পুরনো। কোনও কোনও ব্রিজের বয়স ৫০ থেকে ৭০ বছর কিংবা তারও বেশি। বিভিন্ন নদীর উপর ব্রিজগুলি রয়েছে। সমীক্ষক সংস্থাগুলির পরামর্শ, এই মুহূর্তে ব্রিজগুলির স্বাস্থ্য যে খুব ভালো, তা বলা যাবে না। বরং সেগুলি ‘বিপজ্জনক’ অবস্থায় রয়েছে। সেগুলির পুনরায় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। কিন্তু, এখনই ব্রিজগুলি ভেঙে পুনর্নির্মাণ করা যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এক একটি ব্রিজ নতুন করে গড়তে খরচ পড়বে কমপক্ষে ২০০ কোটি টাকা। আর্থিক সঙ্কটের কারণে ১০ কোটি টাকার বেশি কোনও প্রকল্পের অনুমোদন দিচ্ছে না অর্থ দপ্তর। ফলে আপাতত ব্রিজগুলিতে যানবাহন চলাচলের ঝুঁকি কমাতে বিকল্প পথ খুঁজছে রাজ্য।