পরিবেশ রক্ষায় রান্নাঘরের বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস তৈরির উদ্যোগ এবার নিউটাউনে
পরিবেশের ভারসাম্য বজায় এবং দূষণ রুখতে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করল নিউটাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। আগেই আবর্জনা থেকে বায়োগ্যাস তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল পর্ষদ। আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকেই সেই পরিকল্পনার ব্যবহারিক প্রয়োগ শুরু হয়ে গেল। গত সপ্তাহ থেকে সিজি ব্লকের বলাকা আবাসনের সামনে একটি উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে এনকেডিএ।
নিউটাউনে প্রতিদিন যে পরিমাণ জঞ্জাল উৎপন্ন হয়, তার প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ রান্নাঘর নির্গত। প্রতিদিন নিউটাউনে এখন ৪০ মেট্রিক টন জঞ্জাল উৎপন্ন হয়। হিসেব অনুযায়ী এর মধ্যে প্রায় ৩০ মেট্রিক টন আবর্জনা রান্নার কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী থেকে আসে। এনকেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য হওয়ায় তা থেকে বায়োগ্যাস তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সে কারণেই নিউটাউনের সমস্ত বাড়ি থেকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য আবর্জনা পৃথকীকরণের কথাও বলা হয়েছে। পর্ষদ মারফত জানা গিয়েছে, এই প্ল্যান্টে পাঁচ মেট্রিক টন জঞ্জালকে কাজে লাগিয়ে প্রতিদিন ২৫০ কেজি বায়ো গ্যাস তৈরি করা যাবে। সুতরাং, যদি সমস্ত আবর্জনা বায়োগ্যাস তৈরিতে ব্যবহার করা হয়, তাহলে বিপুল পরিমাণ উৎপাদন করা যেতে পারে। বায়োগ্যাস পরিবেশ বান্ধবও বটে। এনকেডিএ-র এই অভিনব প্রকল্পের খরচ প্রায় ৩২ লাখ টাকা। ঠিক হয়েছে, এই গ্যাস কাজে লাগানো হবে ইকোপার্কের ভিতরে অবস্থিত ‘ক্যাফে একান্তে’ রেস্তরাঁর (সরকারি) রান্নায়।
ইতিমধ্যে এই কাজের জন্য বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বরাত পেয়েছে পুনের একটি সংস্থা। ডিসেম্বর মাসেই এই নয়া প্রকল্প বায়ো গ্যাস উৎপাদন শুরু করবে, দাবি এনকেডিএ -র। এনকেডিএ চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানিয়েছেন, ‘প্ৰথম প্রকল্পটি ডিসেম্বরেই চালু হয়ে যাবে। প্রথমটি ঠিকঠাক সাফল্য পেলে শহরে আরও ৭টি এই ধরনের প্ল্যান্ট বানানো হবে।’ তাঁর মতে, যাতে জঞ্জাল ফেলার জন্য মল্লার ভেরি বা ধাপার মাঠের দরকার না পড়ে, সেজন্যই আগামী দিনে বায়ো গ্যাসের প্ল্যান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে। প্রসঙ্গত, নিউটাউন এলাকার জঞ্জাল আগে ফেলা হতো মল্লার ভেরিতে। বর্তমানে পরিবেশ আদালতের নিষেধাজ্ঞায় সেখানে আবর্জনা ফেলা যাচ্ছে না। এখন কলকাতা পুরসভার আওতাধীন ধাপার মাঠে নিউটাউনের জঞ্জাল ফেলা হলেও, সেখানে নানান সমস্যা। এনকেডিএ-র অধিকারিকদের বক্তব্য, এখন সবকিছু সম্পর্কে মানুষের ধারণা বদলাচ্ছে। জঞ্জালের ক্ষেত্রেও তা চালু হওয়া দরকার। এই ভাবনার জন্য মাস পাঁচেক হল, জঞ্জাল পৃথকীকরণ এবং তা সংগ্রহের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, বাড়ি-বাড়ি বিনামূল্যে শুকনো-ভিজে জঞ্জালের জন্য দুটি করে বিনও দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয় নাগরিকদের থেকেও উল্লেখযোগ্য সাড়া পাওয়া গিয়েছে।