স্বৈরাচার? সব সরকারি কর্মীর নিয়ন্ত্রণ আসছে প্রধানমন্ত্রীর অধীনে
সরকারি চাকরি করতে হলে প্রশাসনিক, ডিজিটাল, তথ্য-প্রযুক্তি এবং সর্বভারতীয় স্তরে সরকারি প্রকল্প পরিচালনার নৈপুণ্য থাকতেই হবে। শুধু তাই নয়, এবার থেকে সরকারি অফিসারদের দক্ষতা যাচাই এবং মানোন্নয়ন প্রক্রিয়া সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসাররা তো বটেই, রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলে রাজ্যে নিযুক্ত সিভিল সার্ভিস অফিসারদেরও এই প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসতে চাইছে কেন্দ্র। ‘কর্মযোগী মিশন’ নামক একটি প্রকল্প বুধবার ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। বস্তুত প্রশাসনিক সংস্কারের নামে এই প্রথম ভারতের আমলাকেন্দ্রিক প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে কর্পোরেট ছাঁচে ফেলা হচ্ছে। এই ব্যবস্থার শীর্ষে থাকবে প্রধানমন্ত্রী হিউম্যান রিসোর্স কাউন্সিল। অর্থাৎ সরাসরি গোটা দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর শীর্ষ পরিচালকদের কর্মধারা নির্ধারণ প্রক্রিয়া আনা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী চালিত একটি কাউন্সিলের অধীনে।
ওই কাউন্সিল দেশের তাবৎ সরকারি অফিসারদের যোগ্যতা নির্ণায়ক প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা যাচাই প্রক্রিয়ার সিদ্ধান্ত নেবে। সেকশন অফিসার থেকে সচিব—সার্বিক স্তরে এই প্রকল্প চালু হচ্ছে। কাউন্সিলের সর্বোচ্চ পদাধিকারী হবেন প্রধানমন্ত্রী। রাখা হবে মুখ্যমন্ত্রীদেরও। অর্থাৎ রাজ্যের অফিসারদেরও এই কাউন্সিলের আওতায় আনতে চাইছে কেন্দ্র। পাশাপাশি তৈরি হবে একটি ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কমিশন। যারা সরকারি কর্মী ও অফিসারদের প্রশিক্ষণের পদ্ধতি ঠিক করবে। তাতেই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকারেরও কর্মী-অফিসারদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলিও কি এই কমিশনের অধীনে আসতে চলেছে?
প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের রাষ্ট্রমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, আমরা চাই রাজ্যগুলির কর্মী ও অফিসাররাও এই প্রক্রিয়ার আওতায় আসুক। তাই মুখ্যমন্ত্রীদের সর্বোচ্চ কাউন্সিলে রাখা হয়েছে। থাকবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার কয়েকজন মন্ত্রীও। গোটা প্রক্রিয়ায় রাজ্য সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রের ফের একটি বিরোধের সূত্রপাত হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ, সিভিল সার্ভিস আধিকারিকরা সকলেই সর্বভারতীয় অফিসার। কিন্তু তাঁরা যে রাজ্যে কর্মরত থাকেন, সেখানকার প্রশাসনের হাতেই থাকে তাঁদের নিয়ন্ত্রণ। এই আইএএস এবং আইপিএসদের দক্ষতা যাচাই এবং তাঁদের পারফরম্যান্সের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের নজরদারি থাকলে রাজ্যগুলি আপত্তি করতে পারে।
যদিও জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, এটা হল নতুন ভারতের যোগ্যতম সরকারি কর্মী অফিসার গড়ে তোলার উদ্যোগ। এবার থেকে সরকারি কর্মী ও অফিসাররা নিজেদের স্কিল ও শিক্ষাগত নৈপুণ্য অনুযায়ী বিশেষ প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। এমনকী বিদেশের কোনও কোর্সে ভর্তিতেও তাঁদের বাধা থাকবে না। অফিসাররা নিজেদের স্কিল অনুযায়ী কোন বিভাগে যেতে চান, তা স্থির করবেন। এরপর দপ্তর বণ্টন করবে কমিশন। বুধবার ঘোষিত প্রকল্প অনুযায়ী, প্রশিক্ষণ পরিকাঠামো এবং প্রশিক্ষক দেবে কেন্দ্রই। এজন্য প্রায় সাড়ে ৫০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন হচ্ছে।