সৌজন্যে স্বাস্থ্যসাথী, প্রাণ ফিরে পেল বিরল রোগে আক্রান্ত কিশোরী
কেউ বলেন ‘পুঞ্জীভূত মেঘ’। কেউ বলেন ‘ধোঁয়া’। আসল নাম ‘মোয়া মোয়া’ (জাপানি শব্দ)। বিরল এই রোগে মস্তিষ্কের ভিতর অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র রক্তবাহী নালি তৈরি হয়। দেখতে অনেকটা ধোঁয়া বা মেঘের মতো। মস্তিষ্কের প্রধান রক্তবাহী ক্যারোটিড ধমনি অজ্ঞাত কারণে বন্ধ হওয়ায়, শরীর বিকল্প হিসেবে ওই অসংখ্য ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র নালি তৈরি করে। কিন্তু তাতেও যে নিস্তার মেলে, এমনটা মোটেও নয়। রোগীর স্ট্রোক হতে থাকে অনবরত। বড় ধরনের স্ট্রোক হলে প্রাণহানিরও আশঙ্কা থাকে। জাপানে এই রোগ দেখা গেলেও, ভারতে তা বিরল। এমনই বিরল রোগে আক্রান্ত হয়েছিল হুগলির চণ্ডীতলার ১৩ বছরের কিশোরী নাজমিন খাতুন। এই রোগের চিকিৎসা খরচ সাধারণের নাগালের বাইরে। কলকাতার মল্লিকবাজারের একটি বেসরকারি নামী হাসপাতালে ডাঃ অমিতকুমার ঘোষ ‘রি ভাসকুলারাইজেশন’ পদ্ধতিতে, অন্য ধমনির মাধ্যমে বাইপাস করে ওই বন্ধ ধমনির রক্তপ্রবাহ সচল করেছেন। অপারেশনের পর সুস্থ হয়ে এদিন বাড়ি ফিরল নাজমিন। যে অপারেশনের খরচ লাগত সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি, তাই সম্পূর্ণ বিনামূল্যে হয়ে গেল। সৌজন্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। স্বাস্থ্যসাথী প্যাকেজে সম্পূর্ণ নিখরচায় চিকিৎসা পেয়েছে এই কিশোরী। তবে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্কের একটি দিকের অপারেশনের কিছুদিন পর, অন্যদিকেও এমন অপারেশন জরুরি। কারণ নাজমিনের সমস্যা রয়েছে মস্তিষ্কের দু’দিকেই। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক পদস্থ কর্তা জানান, রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে ওরা বছরে পাঁচ লক্ষ টাকার চিকিৎসা খরচ সম্পূর্ণ বিনামূল্যে পাবে। সেক্ষেত্রে আশা করছি, বাচ্চা মেয়েটির পরের অপারেশন খরচও সম্পূর্ণভাবে বহন করতে পারবে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড।
বুধবার হাসিমুখে পরিবারের সঙ্গে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি ফিরল নাজমিন খাতুন। এতবড় অপারেশন, সাধ্যের বাইরে খরচ হওয়ার কথা। সেখানে নিখরচায় মেয়েকে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরাতে পেরে খুশি নাজমিনের পরিবার। মেয়ের প্রাণ বেঁচে যাওয়ায় তাঁরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এ প্রসঙ্গে নাজমিনের মেসোমশাই শেখ নাজের আলি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। নাজমিনের বাবা খুবই গরিব। জন খেটে কোনওরকমে সংসার চালায়। মা গৃহবধূ। ছোটবয়স থেকে এই সমস্যা রয়েছে ওর। সে কারণে ভালোমতো পড়াশোনা করতে পারত না। ক’দিন আগে হঠাৎ দেখি, ও দুটি হাত নাড়াতে পারছে না। পক্ষাঘাতগ্রস্তের মতো অবস্থা। এরপরই ওই হাসপাতালে যোগাযোগ করি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকায় অপারেশন, বেড ভাড়া—সবমিলিয়ে একটা পয়সাও লাগেনি। এই কার্ড না থাকলে ওইভাবেই মেয়েটা পড়ে থাকত। যা আর্থিক অবস্থা, কীভাবে অত টাকা জোগাড় হতো?