রাজ্যসভায় পদ হারিয়ে ক্ষোভ সুখেন্দুর? তাই জন্যেই কী প্রতিবাদ? – প্রশ্ন তুললেন ‘আজকাল’-র সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: আরজিকর কান্ডে নানা রকম প্রতিবাদের পাশাপাশি রাজ্যে চলছে বিরোধিদের নৈরাজ্য সৃষ্টির চেষ্টা। সেই হাওয়াতেই ভেসেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায়। হঠাৎ করে কেন তাঁর এই ক্ষোভ প্রকাশ? পেছনে কী অন্য কোনও কারণ লুকিয়ে আছে? এই নিয়েই পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম বাংলা দৈনিকের সম্পাদক স্বনামধন্য সাংবাদিক অশোক দাশগুপ্ত ‘আজকাল’ সংবাদপত্রে লিখলেন তাঁর বিশ্লেষণ। পড়ে নিন ঠিক কী লিখলেন বাংলার অন্যতম প্রবীণ সাংবাদিক। (এই লেখাটি ২১/০৮/২০২৪ এর আজকাল পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।)
বিবেকের ডাক?
বাঃ, পদ ছাড়ুন
স্তম্ভিত হওয়ার সময়। মর্মাহত হওয়ার সময়। কঠোরতম শাস্তি চাওয়ার সময়। ক্ষুব্ধ হওয়ার সময়। এবং দেখার সময়। দেখে যাচ্ছি। ‘রাত দখল’ উপলক্ষে এক অভিনেত্রী প্রতিবাদে শাঁখে আলতো চুমু খেলেন, গাল একটুও ফুলল না, ব্যাকগ্রাউন্ডে শঙ্খধ্বনি। এক ফুটবলার মুখর, তাহলে কি আমার স্ত্রী রাস্তায় বেরোতে পারবে না?
যা হয়েছে, মর্মাহত সবাই। দুশ্চিন্তিত সবাই। অপরাধী বা অপরাধীরা বাদে সবাই। যাঁরা প্রতিবাদে পথে নেমেছেন, তাঁরা সকলেই সরকার-বিরোধী বা তৃণমূল-বিরোধী নন। কেউ কেউ অবশ্যই। পথে নামার, প্রতিবাদ করার অধিকার সবারই আছে। কঠোরতম শাস্তির দাবিতে মিছিল করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও।
চলচ্চিত্র জগতের পরিচিত অনেকে পথে নামলেন । নামতেই পারেন। এঁদের মধ্যে আছেন রাজ চক্রবর্তী। জনপ্রিয় সিনেমার দক্ষ পরিচালক। প্রাণোচ্ছল। মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহভাজন। কোথাও কি তাঁর অসন্তোষের জায়গা একটু আগে থেকেই ছিল? খোঁজ নেওয়ার দরকার নেই । তবে, আমরা বিস্মিত। বলতে পারেন, তিনি নিজেও বলতে পারেন, বিস্মিত হওয়ার কী আছে? এত বড় ঘটনায় যখন সকলেই মর্মাহত, হাজার হাজার মানুষ যখন পথে নেমেছেন, তাঁর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী বিস্ময়ের কী আছে? আছে। এই প্রতিবাদের বর্ণামুখ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে রাজ্য সরকারের দিকে। সেই পথে-নামায় রাজ কেন? মিছিলে তাঁকে স্লোগান দিতেও দেখা গেল। এক্ষেত্রেও স্লোগান দেওয়ার অধিকার অন্যদের থাকলেও, রাজের নেই। নেই, কারণ, তিনি শাসক দলের জনপ্রতিনিধি। মমতা তাঁকে প্রার্থী করেছেন, ব্যারাকপুরের তৃণমূল নেতা ও কর্মীরা পরিশ্রম করে তাঁকে বিধায়ক করেছেন। সেই বিধায়কের সেখানে থাকার নৈতিক অধিকার নেই, যেখানে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রবল আক্রমণ করা হতে পারে। কারণ, তিনি শাসক দলের বিধায়ক। পারেন, সেই পরোক্ষ দাবিতেও থাকতে পারেন। তবে, তার আগে একটা কাজ করে নিতে হবে। বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা।
রাজ সবে বিধায়ক হয়েছেন। কিন্তু সুখেন্দুশেখর রায় তিন দফায় রাজ্যসভায় মমতা-প্রেরিত সাংসদ। পদ পেয়েছেন, গুরুত্ব পেয়েছেন। ভদ্রলোক। মিতভাষী। হঠাৎ তিনি বিদ্রোহী। পাড়ায় প্রতিবাদী অবস্থানে বসলেন । দলের মধ্যে কথা বলা নয়। কড়া বিবৃতি দিলেন। অমিত শাহকে নানা প্রস্তাব-সহ চিঠি পাঠালেন। পুলিশ কমিশনারকে হেফাজতে নেওয়ার দাবি তুললেন।
রাজ্যসভায় ডেরেক ও’ব্রায়েন, দোলা সেন, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেবরা বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন? ৬ বছর হুইপ থাকার পর তাঁর জায়গায় নাদিমুল হক এলেন বলে ক্ষোভ? সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে প্রচারে দেখা যায়নি। এমনিতে শান্তশিষ্ট লোক। প্রণব মুখার্জির অনুগামী থেকেছেন। জনপ্রতিনিধি হননি। টুকটাক সেমিনার করতেন। তৃণমূল তাঁকে শুধু সাংসদ করেনি, দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক করেছে। আর কত পেতে হবে? তৃণমূলের সাংসদ থেকে তৃণমূল-বিরোধী গরম কথা বলা যায় না, একথা প্রবীণ নেতাকে বলে দিতে হবে? প্রণববাবুর অতি ঘনিষ্ঠ থেকেও যা পাননি, পেয়েছেন মমতার ইচ্ছায়, সিদ্ধান্তে। সাংসদ পদে তেরো বছর থাকা হয়ে গেল। মন্দ নয়!
একটা কথা বলেছেন, আমারও মেয়ে আছে…। এই একটা কথা হয়েছে। আমারও মেয়ে আছে। ঘৃণ্য অপরাধের ঘটনায় মর্মাহত হওয়ার জন্য ‘আমার মেয়ে’ থাকতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। যাঁর মেয়ে নেই, শুধু ছেলে আছে, তিনিও আহত-ক্ষুব্ধ হতে পারেন। যিনি নিঃসন্তান, তিনিও মর্মাহত হতে পারেন। ‘আমার মেয়ে’ কথাটা অবান্তর।
সে যা-ই হোক, সুখেন্দুশেখর ভদ্রলোক। বুদ্ধিমান। যোর প্রতিবাদ করতেই পারেন, তার অভিমুখ তৃণমূলের দিকে হতেই পারে। শুধু একটা কাজ করে নিন। বিবেকের ডাকে সাড়া দিয়ে সাংসদ পদটা ছেড়ে দিন।