ব্যাঙ্ক জালিয়াতি কেসে অভিযুক্ত অর্জুন! জোর বিতর্ক
যে ব্যাঙ্কের তহবিল তছরুপের অভিযোগে পুলিশ সাংসদের বাড়িতে তল্লাশি পর্যন্ত চালিয়েছে, সেই ভাটপাড়া-নৈহাটি সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের সভা উত্তপ্ত হয়ে উঠল দু’পক্ষের তর্কাতর্কিতে। দীর্ঘদিন পরে ওই বৈঠকে হাজির হলেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহ। সেখানে তাঁকে বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সদের তোপের মুখে পড়তে হল।
অভিযোগ ছিল, পরিচালকদের অনুমোদন ছাড়াই ভুয়ো বৈঠক ও নথির ভিত্তিতে ২৫ জনকে ঋণ পাইয়ে দিয়েছেন সাংসদ। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে পুলিশ তদন্ত করছে, সে জন্য তিনি এ বিষয়ে কিছু বলবেন না বলে বিতর্ক এড়িয়ে যান বলে অভিযোগ। বৈঠক শেষে অর্জুন অভিযোগ করেন, তৃণমূল এই ব্যাঙ্ক তুলে দিতে চাইছে।
তৃণমূলের তরফ থেকে অভিযোগ তোলা হয়েছে, ভুয়ো ঋণের মাধ্যমে চেয়ারম্যান হিসেবে অর্জুনই গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। অভিযোগ, ২০১৮ সালের মার্চ মাসের ২৩ ও ২৮ তারিখ বোর্ড অফ ডিরেক্টর্সদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ২৫ জন তালিকাভুক্ত ঠিকাদার ভাটপাড়া পুরসভার বিভিন্ন কাজের বরাত পেয়েছেন। তাঁদের কাজের জন্য ব্যাঙ্ক থেকে কয়েক কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হবে। পুরসভা এই ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই কাজের টাকার বিল মেটাবে। সেই সময় ঋণ ও সুদের টাকা ব্যাঙ্ক কেটে নেবে। সেই সময় ভাটপাড়ার পুরপ্রধানও ছিলেন অর্জুন।
মাসকয়েক আগে পুরসভা তৃণমূলের দখলে আসে। তার পরেই জানা যায়, যে কাজের ভিত্তিতে ওই সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, তেমন কোনও কাজই হয়নি পুরসভায়। অথচ তারই ভিত্তিতে প্রায় ১৬ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদে পুরসভার যে ওয়ার্ক অর্ডার জমা দেওয়া হয়েছে, তাও ভুয়ো বলে অভিযোগ ওঠে। তৃণমূল নেতা সোমনাথ শ্যাম বিষয়টি নিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের গোয়েন্দা বিভাগে অভিযোগ জানান।
পুলিশ জানতে পারে, ব্যাঙ্ক-ঋণের টাকা ঘুরপথে অর্জুনের ভাইপো সঞ্জিত (পাপ্পু) সিংহের সংস্থার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে। সেই মামলায় পুলিশ একাধিকবার পাপ্পুকে তলব করলেও তিনি হাজির হননি। পাপ্পুর সংস্থার ঠিকানা যেহেতু অর্জুনের বাসভবন, তাই পুলিশ আদালত থেকে সার্চ ওয়ারেন্ট নিয়ে গোয়েন্দা বিভাগ অর্জুনের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। তার পরেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে অর্জুনকে। এরই মধ্যে ওই ব্যাঙ্কের পরিচালন পর্ষদের ২২ জন সদস্য চিঠি দিয়ে অর্জুনকে বৈঠক ডাকার আবেদন জানান। অভিযোগ তিনি বৈঠক ডাকেননি। তারপরে ওই পরিচালকেরাই এ দিন বৈঠক ডাকেন। অর্জুনকে বৈঠকে হাজির হতে বলা হয়েছিল। সেই মতো এ দিন দুপুরে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকের অ্যাজেন্ডাই ছিল ভুয়ো ওয়ার্কঅর্ডার দিয়ে ঋণ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ।
বৈঠকে পরিচালন পর্ষদের সদস্য মকসুদ আলম জানান, তাঁদের অন্ধকারে রেখে ওই কাজ করা হয়েছে। ব্যাঙ্কে যে নথি জমা দেওয়া হয়েছে সেগুলি ভুয়ো। অর্জুন দাবি করেন, সব নথিই আসল। যেহেতু পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে, সেহেতু এখন তা নিয়ে আলোচনা অবান্তর। তদন্তে সব প্রমাণ হবে। অভিযোগ যখন উঠছে, তখন ব্যাঙ্কের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি কেন আগে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চাননি। মকসুদের দাবি, অর্জুন স্বীকার করেন, তা তিনি করতেই পারতেন। কিন্তু করা হয়নি। বৈঠকে সব নোট করা হয়। ঠিক হয় পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনা হবে। বৈঠক থেকে বেরিয়ে অর্জুন বলেন, “আমাকে হেনস্থা করার জন্য তৃণমূল এ সব করছে। কিন্তু এতে আমাকে দমানো যাবে না। ব্যাঙ্কে যা হয়েছে, সব নিয়ম মেনেই হয়েছে।” সোমনাথ বলেন, “উনি যে কতবড় জালিয়াত তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। ব্যাঙ্ক থেকে ওর সরে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা মাত্র।”