ইয়েচুরি বৌদ্ধিকভাবে অভিজাত এবং আচরণগতভাবে শহুরে কিন্তু নিম্নবিত্তদের দুঃখ-কষ্টে গভীরভাবে ছিলেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সীতারাম ইয়েচুরি। সৌম্য এবং মৃদুভাষী। বামপন্থী রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ, লেখক এবং কলামিস্ট। হ্যাঁ, তাঁর পরিচয় দিতে গেলে হয়তো প্রথমেই এই কথাগুলিই মাথায় আসে। ১৯৫২ সালের ১২ আগস্ট সীতারাম ইয়েচুরি জন্মগ্রহণ করেন চেন্নাইতে একটি তেলেগুভাষী পরিবারে। তিনি বেড়ে ওঠেন হায়দরাবাদে। সেখানে অল সেন্টস হাই স্কুলে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এরপরে তিনি চলে আসেন। সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অর্জন করেন।
তিনি ছাত্রজীবন থেকেই কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন। দিল্লির স্বনামধন্য সেন্ট স্টিফেন কলেজ থেকে অর্থনীতিতে ডিগ্রী এবং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর হয়ে, ২৩ বছর বয়সী সীতারাম ইয়েচুরিকে জেলে যেতে হয়েছিল।
তাঁর রাজনৈতিক ঝোঁক শিক্ষাগত দিক থেকে অনেকটাই বেশি ছিল, যার ফলে তিনি ১৯৭৪ সালে স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া এবং পরের বছরই ভারতের কমিউনিস্ট পার্টিতে যোগদান করেন। জরুরী অবস্থার সময় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বলতে গেলে এই সময় থেকে তিনি রাজনীতির সঙ্গে আরও বেশি করে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। এটি শেষ হওয়ার পরপরই, তিনি এক বছরে তিনবার জেএনইউ স্টুডেন্টস ইউনিয়নের সভাপতি নির্বাচিত হন এবং সেখান থেকে রাজনৈতিক সিঁড়িতে তার ধীর কিন্তু দৃঢ় আরোহন শুরু হয়।
আজ, সিপিআই(এম) এর একজন প্রবীণ সদস্য এবং প্রাক্তন সাংসদ হিসেবে ইয়েচুরি মিত্র বা শত্রু সবার কাছেই দেশের সম্মানিত রাজনীতিবিদদের একজন। ফিদেল কাস্ত্রো, ইয়াসির আরাফাত এবং নেলসন ম্যান্ডেলার মতো কিংবদন্তি বিশ্ব ব্যক্তিত্বদের সাথে সাক্ষাত ও আলাপচারিতার জন্য বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন, তিনি একজন কমিউনিস্ট নেতা হিসেবে বিরল গৌরব অর্জন করেছিলেন, যাকে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ভাষণ দেওয়ার পাশাপাশি শীর্ষ ব্রিটিশ এবং আমেরিকানদের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তিনি নেপালের মাওবাদীদের সংসদীয় গণতন্ত্র মেনে নিতে রাজি করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
সীতারাম ইয়েচুরি দেশের অন্যতম বিশিষ্ট বাম লেখক, দেশ, বিদেশের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেছেন, অনেক বই লিখেছেন। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পরে তাঁর লেখা বই, ‘ স্যাফ্রন ব্রিগেড’ সারা ফেলে দিয়েছিল। বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অভিজাত এবং আচরণগতভাবে শহুরে তবে তিনি ছিলেন এদেশের নিম্নবিত্তদের দুঃখ-কষ্টে গভীরভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
সীতারাম ইয়েচুরি ১৯ এপ্রিল, ২০১৫ সাল থেকে ভারতের পলিটব্যুরো কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক। রাজ্যসভার সংসদ হিসাবে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয়েছিল ২০১৭ সালে। ইয়েচুরিকে এমন একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে দেখা হয়, যিনি অতিডানপন্থীদের ক্ষমতার বাইরে রাখতে জোট করতে আগ্রহী ছিলেন। তিনি এবং পি চিদাম্বরম ১৯৯৬ সালে যুক্তফ্রন্ট সরকারের সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচির খসড়া তৈরি করেছিলেন। প্রথম ইউপিএ জোট সরকারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
পারমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময়, ইয়েচুরি রাজ্যসভায় চুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত শর্ত তালিকাভুক্ত করেছিলেন। মনমোহন সিং সরকার সমস্ত শর্ত মেনে নেওয়ার পরেও প্রকাশ কারাতের বিরোধিতার কারণে সিপিএম ইউপিএ জোট থেকে বেরিয়ে এসেছিল। যা নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। বলা হয়, সে সময় দলের এই সিদ্ধান্তে ইয়েচুরি “অসন্তুষ্ট এবং অসহায়” বোধ করেছিলেন।