একে জাস্টিস বলে? প্রশ্ন হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় মৃতের পরিজনের
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না পেরে মৃত্যু হয়েছে হরিপালের সদানন্দ পালের (৬২)। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গিয়ে হাতে পায়ে ধরেও চিকিৎসা মেলেনি। বাধ্য হয়ে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভিটেমাটি বন্ধক রেখে চিকিৎসা করাতে হয়। তাতে লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রাণও গিয়েছে। দাহকাজ মিটে গিয়েছে। কিন্তু ক্ষোভের আগুন দাউদাউ করে জ্বলছে হরিপালের কৃষ্ণবাটির পাল পরিবারের সদস্যদের বুকে।
একইভাবে ক্ষোভের আগুন পুড়ছেন নিউটাউনের বাসিন্দা উদিতা গঙ্গোপাধ্যায়ও। আন্দোলনের জেরে চিকিৎসা বিভ্রাটের কবলে পড়ে মঙ্গলবার সকালেই এসএসকেএম হাসপাতালে প্রাণ হারিয়েছেন উদীতাদেবীর বাবা বরানগরের বাসিন্দা উৎপল রায়চৌধুরী। কেউই কোনও লিখিত অভিযোগ করেননি। কিন্তু দু’টি মৃত্যুই আরও একবার প্রশ্ন তুলে দিল ‘জাস্টিস’ আন্দোলনের মানবিকতা নিয়ে।
সদানন্দবাবুর ছেলে সৌমেন পাল বলেন, বাবাও চলে গেলেন, ধার করে চিকিৎসাও শেষরক্ষা হল না। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে কেউ বাবাকে ছুঁয়েও দেখেননি। কত আবেদন করেছি, আমরা খুব গরিব। একটু চিকিৎসা দিন। বারবার বলা হয়েছে, ডাক্তার নেই, চিকিৎসা নেই। অন্যত্র নিয়ে যান। শুধু বাবাকে বাঁচাতে বারাসতের বেসরকারি হাসপাতালে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছি। বাবা বাঁচেননি। ডাক্তারবাবুরা চাইলেই বাবা একটু চিকিৎসা পেতেন। একটি আন্দোলনে আমরা সবদিক দিয়ে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছি। আমরা কার কাছে জাস্টিস চাইব? আর এক পিতৃহারা উদিতাদেবী বলেন, সোমবার রাতে উত্তরপাড়ায় বাবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। আমরা তাঁকে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। একজন কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের রোগীকে ভর্তি নিতে বিস্তর টালবাহানা করা হয়েছে। শেষপর্যন্ত ভর্তি হলেও বাবা বাঁচেননি। টালবাহানা কম হলে হয়তো বাবা বেঁচে যেতেন। একে জাস্টিস বলে?
এসএসকেএমের মেইন বিল্ডিংয়ের সামনে ত্রিপল পেতে বসে রয়েছেন আখতার শাহ ও তাঁর পরিবার। জামাইবাবু গত আটদিন ধরে এখানেই ভর্তি। আখতার বলছিলেন, ‘প্রথম চারদিন ডাক্তারবাবু নিয়মিত এসেছেন। তারপর আর আসছেন না। ডাক্তারবাবুরা নেই শুনছি।’ খেতে কাজ করার সময় বিষধর সাপ কেটেছিল খুশবন্ত খাঁকে। গ্রাম থেকে ভালো চিকিত্সার জন্য শহরে আনা হয়েছিল তাঁকে। রাজ্যের পয়লা নম্বর হাসপাতালে ভর্তি করতে পেরেও স্বস্তি নেই আখতারদের। কেন? ‘পাঁচটা তো বাজতে চলল! কর্মবিরতি উঠল কই? সুপ্রিম কোর্টের কথা শুনছে না। আমাদের কথা তো আরও শুনবে না’… আপন মনে বলতে বলতে চলে গেলেন আখতার।